কুষ্টিয়ায় গড়াই নদে কুমির, খাবারের জন্য চরে ছাড়া হয়েছে ছাগল

কুষ্টিয়ায় গড়াই নদে কুমির দেখতে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লোকজন ভিড় করছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের জুগিয়া ভাটাপাড়া এলাকায় গড়াই নদের পাড়েছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন পদ্মা নদীর শাখা গড়াই নদে কয়েক দিন ধরে একাধিক কুমির দেখা গেছে। কুমির দেখতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের জুগিয়া ভাটাপাড়া গোরস্তান এলাকায় গড়াই নদের পাড়ে ভিড় করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নদে কম পানিতে কুমিরের দেখা পাওয়ায় জেলেরা মাছ ধরতে পানিতে কম নামছেন।

এদিকে কুমিরদের খাবার দিতে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ) কুষ্টিয়া শাখার সহসভাপতি ও পাখিপ্রেমী শাহাব উদ্দিন নদের চরে ছাগল ও হাঁস-মুরগি ছেড়েছেন। তবে সেগুলো খেতে আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কুমির যায়নি। আজ সকাল থেকে দুই থেকে তিনবার কয়েক সেকেন্ডের জন্য কুমির মাথা উঁচু করেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

আজ বেলা দুইটার দিকে গড়াই নদের পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী নারী, পুরুষ ও শিশু নদের পাড়ে বসে আছেন। তাঁরা কুমির দেখতে সকাল থেকে সেখানে আছেন। পদ্মার উৎসমুখ থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে গড়াই নদের ভাটাপাড়া এলাকা। সেখানে নদের মাঝে চরও জেগেছে। চর জাগার এক পাশে ফালি হয়ে কিছু পানি জমে আছে। সেই পানিতে মূলত কুমির দেখেছেন স্থানীয় লোকজন।

কুমিরের ছবিটি স্থানীয় যুবক সুজন আলীর ফেসবুকে করা লাইভ থেকে সংগৃহীত

কুমির দেখা লোকদের একজন স্থানীয় জেলে খাদিমুল ইসলাম। তিনি চার দিন ধরে কুমির দেখেছেন। কুমিরের ভয়ে মাছ ধরতে পানিতে নামছেন না। এ জন্য সেখানে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘নেজের (লেজ) দিকটা চিকন বড়। আর এত্ত বড় মাথা। গায়ে কাঁটা কাঁটা। কুমির ওঠে আর ডুব দেয়। ভয়ে আর নামছিনে। মানুষ দেখতে আসছে। তাই ঝালমুড়ি বিক্রি করছি।’

নদের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা জুগিয়া এলাকার বাসিন্দা পেশায় ট্রাকচালক সুজন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আমি নদে কুমির দেখি। বড় আকারের কুমিরটি জেগে ওঠা চরে শরীরের অর্ধেক বের হয়ে শুয়ে ছিল। সেটা মুঠোফোনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েক মিনিট লাইভও করেছিলাম। এরপর আরও দুই দিন দেখেছি।’

কুমিরের খাবার হিসেবে চরে রাখা হয়েছে ছাগল ও হাঁস-মুরগি। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের জুগিয়া ভাটাপাড়া এলাকায় গড়াই নদে
ছবি: প্রথম আলো

কুমিরের খবর পেয়ে সোমবার সেখানে দুটি মুরগি নিয়ে যান শাহাব উদ্দিন। সারা দিন রাখলেও সেটা খেতে কুমির আসেনি। এরপর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সেখানে নদের পাড়ে জেগে ওঠো চরে একটি মোটাতাজা ছাগল বেঁধে রাখেন তিনি। পাশাপাশি পানিতে চারটি হাঁসও ছেড়ে দেন।

শাহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে নদের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। হয়তো কোনোভাবে কুমির এখানে এসেছে। কিন্তু সে কোনো খাবার পাচ্ছে না। এ জন্য হাঁস, মুরগি ও ছাগল আনা হয়েছে। কুমির সংরক্ষণ করতে হবে। তার সঙ্গে ভাব জমাতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি উদ্ধার করা যায়। বিষয়টি বন বিভাগকেও জানানো হয়েছে।