গাভি বাঁচাতে গিয়ে মা-ছেলে দগ্ধ, টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা
উন্নত জাতের একটি গাভি পালতেন মনজুয়ারা বেগম (৪৫)। দিনে ১৮ লিটার দুধ দিত গাভিটি। দুধ বিক্রির টাকায় চলত চার সদস্যের সংসার আর দুই ছেলের পড়ালেখার খরচ। কিন্তু গোয়ালে আগুন লেগে মারা যায় গাভিটি। দগ্ধ হয় দুই মাসের বাছুরটিও। গাভি ও বাছুর বাঁচাতে গিয়ে দগ্ধ হন মনজুয়ারা বেগম ও তাঁর ছেলে মঈনুদ্দীন (২২)।
গতকাল বুধবার রাতে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া গ্রামের প্রয়াত আলী আশরাফের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। অগ্নিদগ্ধ মনজুয়ারা বেগম আলী আশরাফের স্ত্রী এবং মঈনুদ্দীন তাঁদের ছেলে। অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায় মঈনুদ্দীনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে মঈনুদ্দীনের ছোট ভাই জয় বলেন, তাঁর ভাইয়ের শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। চিকিৎসকেরা তাঁর ভাইকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য তাঁদের নেই। টাকার অভাবে গ্রামবাসীর সহায়তায় রাজশাহী পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ির জায়গা ছাড়া কোনো ফসলি জমি নেই। মঈনুদ্দীন ও জয়ের বাবা আলী আশরাফ স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। বেতনের টাকায় কোনোরকমে সংসার চলত। গত ২৬ মার্চ মারা যান তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর আগে বেতনের বিপরীতে ঋণ নিয়ে দেড় লাখ টাকায় দুধেল গাভিটি কিনেছিলেন আলী আশরাফ। গতকাল রাতে বাছুরসহ গাভিটিকে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে পাটখড়ির বেড়ার গোয়ালে কয়েল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কয়েল থেকে গোয়ালে আগুন ধরে যায়। টের পেয়ে গাভিটিকে রক্ষায় মনজুয়ারা ও ছেলে মঈনুদ্দীন গোয়ালের দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু আগুন তো নেভাতেই পারেনইনি, বরং তাঁরাও দগ্ধ হন। আগুনে মায়ের ডান হাত ও পিঠ এবং মঈনুদ্দীন দগ্ধ হলেও রক্ষা করতে পারেননি গাভিটিকে। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে পরিবারটি। এখন দগ্ধ ছেলের চিকিৎসার খরচ নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবারটি।
আলী আশরাফের তিন ছেলে। এর মধ্যে বড় ছেলে মঈনুদ্দীন স্নাতক ও মেজ ছেলে জয় উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) প্রথম বর্ষে পড়েন। ছোট ছেলে আইন উদ্দীনের বয়স মাত্র দেড় বছর। মঈনুদ্দীনকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন পরিবারটির। পড়ালেখা করে পরিবারের অভাব ঘুচাবেন তিনি। ছোট দুই ভাইকে মানুষ করবেন। এখন অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনিই সংসারের বোঝা হয়ে উঠেছেন। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না তাঁর।
মনজুয়ারা বেগম জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের চাকা সচল রাখতে গাভিটি ভরসা হয়ে উঠেছিল। তাই গাভিটিকে অনেক যত্নে লালন–পালন করতেন তিনি। দুই মাস আগে গাভিটি একটি বাছুর জন্ম দেয়। দুধ বিক্রির টাকায় সংসার ও ছেলেদের পড়ালেখার খরচ চলে যেত। গাভিটি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া তাঁদের আয়রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।