অ্যাসিডে ঝলসে গেল প্রবাসীর স্ত্রীর শরীর, অভিযোগ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় অ্যাসিড দিয়ে শারমিন আক্তার (২৮) নামের এক গৃহবধূর শরীর ঝলসে দেওয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সদর উপজেলা উরফি ইউনিয়নের উরফি পশ্চিমপাড়া মুন্সি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
আহত শারমিন আক্তার উরফি পশ্চিমপাড়া গ্রামের প্রবাসী হানিফ মুন্সির স্ত্রী ও একই এলাকার কালু মুন্সির মেয়ে। অ্যাসিড নিক্ষেপের জন্য ওই গ্রামের চাঁন মিয়া মুন্সির ছেলে শাহিন মুন্সি, তাঁর স্ত্রী সুমি বেগম ও প্রতিবেশী আনিস মুন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শারমিনের স্বামী হানিফ প্রবাসে থাকেন। গতকাল রাতে ছয় বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন শারমিন। রাত দেড়টার দিকে সিঁধ কেটে কয়েকজন তাঁর ঘরে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁরা চুলের মুঠি ধরে শারমিনকে চৌকি থেকে নামিয়ে শরীরে অ্যাসিড ঢেলে দেন। প্রতিবেশী আনিস মুন্সির সহযোগিতায় শাহিন মুন্সি-সুমি বেগম দম্পতি ওই কাজ করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী নারীর। পরে শারমিনের চিৎকারে ননদ ও শাশুড়ি ছুটে এসে তাঁকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালের চিকিৎসক বিচিত্র কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে অ্যাসিডে ঝলসানো এক রোগীকে পানি দিতে দিতে হাসপাতালে আনেন স্বজনেরা। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোগীর শরীরের কিছু অংশ পুড়ে গেছে, তবে কত অংশ পুড়েছে, তা এখনই বলা যাবে না। সার্জারি বা বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকেরা ওই তথ্য দিতে পারবেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মহিলা ওয়ার্ডের ১৫ নম্বর শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন শারমিন। তাঁর পায়ের কাছে ঘুমিয়ে আছে ছয় বছরের ছেলে। পাশে বসে তাঁর মা মেয়ের হাত ও পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। পাশের শয্যায় শাশুড়ি খাদিজা বেগম বসেছিলেন।
শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঘুমিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি কেউ আমার চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে চৌকি থেকে নামাচ্ছে। তখন শাহিন মুন্সিকে তাঁর স্ত্রীকে বলতে শুনলাম, “আমার হাতে দে।” এরপর আমার গায়ে কী যেন ঢেলে দেয়। আমি যন্ত্রণায় শুধু গড়াগড়ি করছিলাম। আমার চিৎকারে অন্য লোকজন আসে।’
শারমিনের শাশুড়ি খাদিজা বেগম বলেন, শাহিন তাঁর ভাশুরের ছেলে। কয়েক দিন আগে নিজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে শারমিনের বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেন শাহিন। ওই মামলায় ঈদের আগে জেলে যান শারমিনের বাবা। এরপর শারমিন, তিনিসহ (শাশুড়ি) আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে শাহিন মারধরের মামলা করেন। সেখান থেকেই মূলত শত্রুতা শুরু। এ ছাড়া জমিজমা নিয়ে শাহিনের সঙ্গে তাঁদের দ্বন্দ্ব আছে। তিনি বলেন, ‘শারমিনের বাবার বাড়ি ও আমাদের বাড়ি পাশাপাশি। ঘটনার আগের দিন শারমিনের মা আমাদের জমিতে কিছু খড়ের পালা রাখেন। ওই পালা সরানো নিয়ে শাহিনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। রাতে এত বড় কাজ করে গেল বুজতে পারিনি। পুরুষ মানুষ বাড়িতে না থাকায় এখনো মামলা করতে পারিনি। সকালে করব।’
অভিযোগের বিষয়ে শাহিন মুন্সি ও তাঁর স্ত্রী সুমি বেগমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ভুক্তভোগী নারীর বাড়ি ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। ওই গৃহবধূর শরীরের বাঁ পাশ অ্যাসিডে ঝলসে গেছে। কে বা কারা করেছেন, এখনো কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।