কিশোরগঞ্জের ভৈরব
ডিমের উৎপাদন এক মাসেই কমল ৬ লাখ
আগস্টে উৎপাদন আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা। ডিমের উৎপাদন কম ও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে ডিমের দাম বেড়েও গেছে।
এক মাস আগে থেকে ভৈরবের কিছু খামারের মুরগি এইচ-৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মুরগি নিয়মিত ডিম দিতেপারে না।
চলতি বছরের জুন মাসে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ডিমের উৎপাদন ছিল ৪৫ লাখ পিস। পরের মাস জুলাইয়ে এসে ৬ লাখ কমে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৩৯ লাখ। আগস্টে উৎপাদন আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা খামারি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের।
খামারিদের ভাষ্য, এক মাস আগে থেকে ভৈরবের কিছু খামারের মুরগি এইচ-৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মুরগি নিয়মিত ডিম দিতে পারে না। এ জন্য ডিম উৎপাদন কমতির দিকে। আগস্টে ডিম উৎপাদন আরও কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে ডিমের উৎপাদন কম ও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে ডিমের দাম বেড়েও গেছে।
উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের কাছারিঘাটের খামারি জাকির হোসেন। তাঁর খামারে লেয়ার মুরগির সংখ্যা দুই হাজার। এইচ-৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় দুই সপ্তাহ আগে তিনি এক হাজার মুরগি বিক্রি করেন। কিছু মুরগি মারা যায়। এখন খামারে মুরগি আছে ৯০০টি। এই সংখ্যা থেকে গত শনিবার সকালে ডিম পেয়েছেন ২৬২টি। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও ৮০০–এর ওপরে ডিম পাওয়া যেত।
জাকির হোসেন জানান, দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন খামারে ডিম কমছে। এখন দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ পাওয়া যায় ১২ ঘণ্টা। আবার বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এ কারণে জেনারেটর পরিচালন ব্যয়ও বেড়েছে। উৎপাদন কম হওয়া ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিমের দাম বাড়লেও সুবিধা খামারিদের পকেটে যাচ্ছে না।
পশুচিকিৎসকেরা জানান, বার্ড ফ্লু ভাইরাসের ধরন দুই প্রকার। একটি হলো এইচ-৫। অন্যটি এইচ-৯। এইচ-৫ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মুরগি মেরে ফেলতে হয়। তবে এইচ-৯ ততটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। উপসর্গ হিসেবে ত্বকের স্তরের নিচে লাল লাল চিহ্ন দেখা দেবে। জ্বর থাকবে ও মুরগি ঝিমাবে। মৃত্যুর হার মাত্র ১০ শতাংশ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভৈরবে বার্ষিক ডিমের চাহিদা ৪ কোটি ৯০ লাখ পিস। মাসিক চাহিদা ৪১ লাখ। ভৈরবে বর্তমানে ব্রয়লার খামারের সংখ্যা ১৮৮। সোনালি মুরগির খামার ৭১টি। লেয়ার মুরগির খামার ৮৯টি। আর হাঁসের রয়েছে ৩২টি। ৮৯টি লেয়ার খামারে মুরগির সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজার ১২০টি। এই সংখ্যা থেকে জুন মাসে ডিম পাওয়া যায় ৪৫ লাখ পিস, জুলাই মাসে কমে হয় ৩৯ লাখ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরবের প্রায় সব কটি খামারে আগের তুলনায় এখন ডিম কম পাওয়া যাচ্ছে। ডিম কম পাওয়ার পেছনে প্রায় সবাই এইচ-৯ ভাইরাসের আলোচনাটি সামনে আনছেন। ভাইরাস, জ্বালানি তেল ও ফিডের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে অনেকে মুরগির সংখ্যা কমিয়ে ফেলছেন। আবার অনেকে সব বিক্রি করে খামার শূন্য করে রেখেছেন। এই তিন সমস্যার সমাধান করা না গেলে প্রতি মাসে উৎপাদন কমে আসবে।
উপজেলার বাউসমারা গ্রামের খামারি শিপন মিয়ার খামারে এখন মুরগির সংখ্যা দুই হাজার। তিনি বলেন, ‘আমার খামারেও প্রতিদিন ডিম কম পাচ্ছি। আমার পাশের দুই খামারেও ডিমের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারণ হিসেবে মনে হচ্ছে এইচ-৯ ভাইরাস। বিষয়টি প্রাণিসম্পদ বিভাগকে জানিয়েও প্রতিকার মিলছে না। সে কারণে বেসরকারি পর্যায় থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এটি করতে অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ফলে বেশি দামে ডিম বিক্রি করেও পোষানো যাচ্ছে না।’
তবে কান্দিপাড় গ্রামের আরিফ মিয়া বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এইচ-৯ ভাইরাস আমার খামারে আক্রমণ করতে পারেনি। সে কারণে গতকাল সকালেও আমার খামারে ডিম পাড়ার হার ছিল ৯৪ ভাগ।’
পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন সাইফুল আজমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এইচ-৯ নিয়ে খামারিদের মধ্যে কথা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো তাঁরা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পথে হাঁটেন না। তাঁরা নিজেদের মতো করে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। এতে সর্বনাশ হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শিরীনা খাতুন বলেন, ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে শুধু এইচ-৯ ভাইরাসকে দায়ী মনে হয় না। এর পেছনে ফিডের মূল্য ও জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।