ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীকে পুলিশে দিল কুয়েট প্রশাসন
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে ওই শিক্ষার্থীকে কুয়েটের ড. এম এ রশীদ হলের কিছু শিক্ষার্থী মারধর করে প্রথমে হল প্রশাসন ও পরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। পুলিশ আহত অবস্থায় তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পরে মামলা হলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ওই শিক্ষার্থীর নাম জাহিদুর রহমান। তিনি ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। জাহিদুর কুয়েটের ড. এম এ রশীদ হলের ১১৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাটি করেছেন কুয়েটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন প্রামাণিক। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে টেলিগ্রাম অ্যাপের একটি গ্রুপে আপত্তিকর ভাষায় এবং উসকানিমূলক তথ্য প্রচারের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। মামলাটিতে রেজওয়ান স্যাম (২১) নামের আরও এক তরুণকে আসামি করা হয়েছে। রেজওয়ান অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং টেলিগ্রাম অ্যাপের ওই গ্রুপের সদস্য। খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয় প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর মারধরের পর হলের প্রাধ্যক্ষ, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে জাহিদুরকে হেফাজতে নেন। এরপর তাঁকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ, মামলার বাদী, শিক্ষার্থী ও হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই মাস আগে হলে ওঠেন জাহিদুর। তিনি মুঠোফোন ও ল্যাপটপে বেশির ভাগ সময় কাটাতেন। গত রোববার দুপুরে গোপালগঞ্জে এক বন্ধুর কাছে গিয়েছিলেন জাহিদুর। ওই দিন তিনি টেলিগ্রাম অ্যাপের একটি গ্রুপে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে আপত্তিকর ভাষায় এবং উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করেন। সন্ধ্যায় কুয়েটের নিজ হলে ফিরে এলে হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী টেলিগ্রাম অ্যাপের কর্মকাণ্ডের জন্য জাহিদুরকে মারধর করেন। পরে হলের প্রাধ্যক্ষ, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে তাঁকে হেফাজতে নেন। এরপর তাঁকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ জাহিদুরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরদিন সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়।
মামলার বাদী সাদেক হোসেন প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী, ভোলার একটি সরকারি কলেজের একজন শিক্ষার্থী এবং জাহিদুর টেলিগ্রামে একটি গ্রুপ চালাতেন। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর নিয়ে তাঁরা ভীষণ বাজে ভাষায় মন্তব্য করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে হলের উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা রোববার রাতে জাহিদুরকে তাঁর ল্যাপটপ ও মুঠোফোনসহ আটক করেন। আমরা এসে তাঁকে পুলিশে দিয়েছি। মামলা করেছি।’
ড. এম এ রশীদ হলের প্রাধ্যক্ষ মো. হামিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে হলের ছাত্ররা জানতে পারেন, ওই শিক্ষার্থী দেশবিরোধী বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে সংযুক্ত। রোববার রাত নয়টার দিকে আমরা তাঁকে হেফাজতে নিয়ে কিছু কথাবার্তা বলেছি। তিনি এসব বিষয় স্বীকার করেছেন। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর মনে করেছি যে বিষয়টা পুলিশ প্রশাসনকে জানানো উচিত। পরে পুলিশ এসে বিষয়গুলো যাচাই–বাছাই করে তাঁকে নিয়ে গেছে।’
মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীরা যখন তাঁর কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, তখন হয়তো কিছু চড়থাপ্পড় দিয়েছেন। আমাদের সম্মুখে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে পুলিশ আমাদের বলেছিল, শিক্ষার্থীরা হয়তো কিছুটা মারধর করেছেন। আমরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পুলিশের পরামর্শে আমরা আমাদের অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছি। তারা হাসপাতালে ভর্তি করেছে।’