কুষ্টিয়ায় নিখোঁজের ১৯ ঘণ্টা পর পুকুরে ভেসে উঠল শিশুর লাশ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নিখোঁজের প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর সিদরাতুল মুনতাহা নামের আড়াই বছর বয়সী এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর সরদারপাড়ার হাকিম সরদারের পুকুর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
লাশ উদ্ধার হওয়া শিশুটি ওই এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের মেয়ে। খবর পেয়ে বেলা দুইটার দিকে কুমারখালী থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটির সুরতহাল করে। তবে ময়নাতদন্তের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শিশুটির চাচা মিরাজুল ইসলামের ভাষ্য, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আশপাশের পুকুর, প্রতিবেশী, স্বজনদের বাড়িসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ওই দিন রাতেই থানায় জিডি করা হয়। এরপর আজ সকালে এক স্থানীয় কবিরাজের কাছে গিয়েছিলেন শিশুটির বাবা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কবিরাজের দেখানো পুকুর থেকে শিশুটির ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়।
মরদেহ উদ্ধারের প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবেশী আতিয়ার রহমান বলেন, পুকুরের জায়গায় রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে। পাওয়া যায়নি। তবে দুপুরে শিশুর বাবা প্রথমে পানিতে নামেন। পানিতে দুধ ও লবণ ফেলা হয়। একটা ডাবও ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ডাবও ভেসে উঠল, লাশও ভাসল।
এলাকাবাসী জানান, শিশুটির বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে একটি ইটভাটা আছে। ভাটায় শিশুর বাবা ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। প্রায়ই শিশুটি একা একা হেঁটে ইটভাটায় যেত। গতকাল বিকেলে বাবার কাছে যাওয়ার সময় শিশুটি নিখোঁজ হয়েছিল।
আজ সকাল থেকে পুকুরের পানিতে জাল টেনে খোঁজা হচ্ছিল। সড়ক ও পুকুরপাড়ে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে স্বজনেরা শিশুটির লাশটি উদ্ধার করেন। তখন স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিশুটির মা পিংকি খাতুন বলেন, ‘মেয়ে প্রায়ই একা একা ওর বাবার ইটের ভাটায় যেত। আমার কোনো শত্রু নেই। কেউ ওকে মারেনি। আল্লাহর মাল আল্লাহ নিছে। কোনো অভিযোগও নেই।’ বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে কবিরাজের দেখানো পুকুরে লাশ পেয়েছি। ওই পুকুরে জলপরি আছে। হয়তো আমি জলপরির কোনো ক্ষতি করেছি। সে জন্য আমার মেয়েকে জলপরিই মেরেছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই।’
গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ হাকিম সরদার বলেন, ‘বাপ–দাদার মুখে শুনতাম, তালগাছের ওখানে প্রায় গরু ও মহিষ মরে থাকত। প্রায় ৩৫ বছর আগে এলাকার নিজাম নামের একজন মারা গিয়েছিল। এই পুকুরে এ নিয়ে তিনজন মারা গেল।’
কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মু. আহসানুল মিজান বলেন, স্বজনদের দাবি অযৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত নয়। ময়নাতদন্ত করলে সঠিক কারণ জানা যাবে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম বলেন, গতকাল বিকেল থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল। আজ দুপুরে পুকুর থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করে সুরতহাল করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত হবে কি না, তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।