পুত্রবধূ হত্যা মামলায় ভৈরবে র্যাবের হাতে শাশুড়ি আটক, পরে মৃত্যু
ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে সুরাইয়া বেগম (৫২) নামের এক নারীকে আটক করে র্যাব–১৪। পূত্রবধূ হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে উপজেলার নতুন বাজার এলাকা থেকে আটক করা হয় বলে স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
রাতেই ওই নারীকে র্যাব–১৪ ভৈরব ক্যাম্পে আনা হয়। আজ শুক্রবার সকালে মৃত অবস্থায় তাঁকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় র্যাব। জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে র্যাবের ভৈরব ক্যাম্পের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ভৈরব ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক ফাহিম ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ময়মনসিংহ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসবেন। তাঁরা এ বিষয়ে ব্রিফ করবেন। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাতটার দিকে সুরাইয়া খাতুনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন র্যাবের সদস্যরা। তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সুরাইয়ার লাশটি ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছে। হাসপাতালে পুলিশ সদস্যরা আছেন। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এলে লাশের সুরতহাল করা হবে। ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলামের ভাষ্য, ‘এ ঘটনায় তাঁদের দায়িত্ব হলো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে কেবল মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত করানো।’
বেলা ১টা ৮ মিনিটে কথা হয় ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিলা বিনতে মতিনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে তাঁকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানানো হয়নি। লিখিতভাবে জানালে আইনি প্রক্রিয়া মেনে তাঁরা কাজ শুরু করবেন।
মারা যাওয়া সুরাইয়া খাতুন নান্দাইল উপজেলার বরুনাকান্দা গ্রামের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার একটি বিস্কুট কারখানায় চাকরি করতেন সুরাইয়ার ছেলে তাইজুল ইসলাম (২৩)। একই কারখানায় কাজ করতেন নান্দাইলের ভেলামারী গ্রামের হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তার (২০)। পরে প্রেম থেকে সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়। কিন্তু বিয়ের এক বছর না যেতেই চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল শ্বশুরবাড়িতে রেখার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রেখার শ্বশুর থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। অন্যদিকে রেখার পরিবার নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ তোলে।
আদালত সূত্র জানায়, রেখার মৃত্যুর ঘটনায় রেখার মা রামিছা খাতুন বাদী হয়ে গত সোমবার নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি গত বুধবার নান্দাইল থানায় নথিভুক্ত হয়। মামলায় রেখার স্বামী তাইজুল ইসলাম, শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বা রেখার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, বর্তমানে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে সুরাইয়ার ছেলে তাইজুল র্যাবের হাতে আটক আছেন। তাইজুলকে গতকাল রাতে ঢাকা থেকে আটক করা হয়। পুলিশ ও স্বজনেরা জানান, গতকাল একইভাবে নান্দাইলের নতুন বাজার এলাকা থেকে সুরাইয়াকে আটক করেন র্যাবের ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা। তখন আজিজুল সেখান থেকে পালিয়ে যান।
আজ দুপুরে আজিজুলের বাড়ি বরুনাকান্দায় গিয়ে তাঁর মা আনোয়ারা বেগম (৭৫) ছাড়া পরিবারের আর কাউকে পাওয়া যায়নি। আনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, রাত আটটার পর থানা থেকে খবর আসে, জরুরি ভিত্তিতে আজিজুল ও সুরাইয়া যেন থানায় যান। খবর পেয়ে তাঁরা থানায় যাচ্ছিলেন। পরে জানতে পারেন, র্যাব সুরাইয়াকে ধরে নিয়ে গেছে। সুরাইয়াকে ধরে নেওয়ার দৃশ্য দূর থেকে দেখে আজিজুল সেখান থেকে পালিয়ে যান।
থানায় ডাকার কারণ জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, হত্যা মামলা হওয়ার আগে ওই ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছিল। রেখার শ্বশুর আজিজুল মামলাটি করেছিলেন। মূলত অপমৃত্যুর মামলার তদন্তের প্রয়োজনে তাঁদের থানায় ডাকা হয়েছিল। তাঁরা থানায় এসে পৌঁছাতে পারেননি। এর আগে শহরের নতুন বাজার এলাকা অতিক্রম করার সময় সুরাইয়া র্যাবের হাতে আটক হন। আজিজুল তাঁকে ফোন করে বিষয়টি জানান।
এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও মামলার বাদী রেখার মা রামিছা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তিনি আগে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে মেয়েকে হত্যার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন রেখা। অটোরিকশা কেনার টাকার জন্য অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছেন। হত্যার পরও বিভিন্ন সময় আসামিরা হুমকি দিয়ে আসছিলেন।