ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত সোহাগ মিয়ার পরিবারের পাশে সুনামগঞ্জ বন্ধুসভা
সংসারে দারিদ্র্য আর টানাপোড়েনের কারণে গ্রাম ছেড়ে দুই ভাই চলে যান ঢাকায়। সেখানে কাজ করেন পোশাক কারখানায়। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেন তাঁরা। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হন দুই ভাই। এর মধ্যে বড় ভাই সোহাগ মিয়া (২৪) ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আর ছোট ভাই শুভ মিয়া (২০) এখনো সেদিনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন।
সোহাগ মিয়ার হতদরিদ্র পরিবারের খোঁজ নিতে গতকাল সোমবার তাঁদের বাড়িতে যান সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা। সোহাগের বাবা, মা, শুভ ও তাঁর স্ত্রী, পরিবারের আরও দুই শিশুর জন্য নতুন কাপড় এবং খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যান তাঁরা। এতে খুশি হন ওই পরিবারের সদস্যরা।
সোহাগ মিয়ার বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের গোলামীপুর গ্রামে। জেলা শহর থেকে ওই গ্রামের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। গতকাল জেলা শহর থেকে সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা রাজু আহমেদ, সাবেক সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল, সভাপতি সৌরভ সরকার, সাধারণ সম্পাদক তাজকিরা হক, জ্যেষ্ঠ সদস্য জাকিরুল হক গোলামীপুর গ্রামে সোহাগ মিয়ার বাড়িতে যান। বাড়িতে তখন সোহাগের বৃদ্ধ বাবা কালাম মিয়া, মা রোকেয়া বেগমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এই পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কাটান তাঁরা এবং সবার খোঁজখবর নেন। বন্ধুসভার পক্ষ থেকে পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়।
বন্ধুসভার সভাপতি সৌরভ সরকার বলেন, ‘এই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে পেরে আমাদের খুব ভালো লেগেছে। খুবই সহজ–সরল তাঁরা। এই কষ্টের মধ্যেও তাঁদের আন্তরিকতা আমাদের মুগ্ধ করেছে। আমরা বলে এসেছি, যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।’
সোহাগ মিয়ার মা রোকেয়া বেগম নিজে বন্ধুসভার সদস্যদের আপ্যায়ন করেন। নিজেদের গাছের কলা খেতে দেন। রোকেয়া বেগম বলেন, ‘ছেলেডার জন্য কানতে কানতে চোখের পানি শুকাই গিছে। এখন পুলার বয়সী কেউরে পাশে দেখলে শান্তি পাই। হেরা শহর থাকি কত কিছু লইয়া আইছে। দেইখ্যা ভালা লাগছে।’
সোহাগের বাবা কালাম মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে বড়, বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেদের মধ্যে সোহাগ মিয়া দ্বিতীয়। চার বছর আগে সোহাগ সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেন। এরপর জমি, ঘরের গরু আর মহাজনি সুদে ঋণ করে প্রায় চার লাখ টাকা জোগাড় করে দেন দালালকে। কিন্তু সব টাকা খোয়া যায়। এরপর সুদের টাকার চাপে ছোট ভাই শুভ মিয়াকে (২০) নিয়ে গ্রাম ছাড়েন সোহাগ। ঢাকায় গিয়ে পোশাক কারখানায় কাজ নেন দুই ভাই, থাকতেন বাড্ডার হোসেন মার্কেট এলাকায়। যা আয় করতেন, মাসে মাসে সেখান থেকে কিছু টাকা পাঠাতেন বাড়িতে। সেই টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করছিলেন বাবা। হৃদ্রোগে আক্রান্ত কালাম মিয়ার চিকিৎসার খরচও দিতেন সোহাগ। গত ৫ আগস্ট সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন দুই ভাই। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হন দুজনই। ঘটনাস্থলেই সোহাগ মিয়া মারা যান।