এই সরকার যদি পারত, তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন হতে পারত না: খন্দকার মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা নিজেই তাঁর দলকে হত্যা করেছে। মাঠে এখন আওয়ামী লীগ নাই। এখন যদি নির্বাচন হয়, তাহলে জনগণের একমাত্র বিকল্প হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এখন যে সরকার চলছে, সেটি কারও নির্বাচিত সরকার নয়। এই দেশে প্রমাণিত হয়েছে, জনগণের সবচেয়ে প্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। আর দ্বিতীয়তে ছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ এই দেশে ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। সে কারণে তাদের নেত্রী পালিয়ে গিয়েছেন।’
আজ সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে মুন্সিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সড়কে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদ এবং দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং পতিত ফ্যাসিস্টদের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ছাত্র–জনতা ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। যেন এই সরকার জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিতে পারে। আর জনগণের সবচেয়ে বড় অধিকার ভোটের অধিকার। তাই জনগণের প্রত্যাশা, যত দ্রুত সম্ভব, এ দেশের মানুষের ভোটের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে একটি সংসদ নির্বাচন করা। এই সরকারের উচিত যত শিগগির সম্ভব বিদায় নেওয়া। যদি এমন হয়, এই সরকার সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে পারবে। জনগণও রক্ষা পাবে, মুক্তি পাবে।’
বিএনপির এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘এই সরকারের ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ নানাভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তাঁদের কেউ কেউ দাবি করছেন স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক। আর জনগণের দাবি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যাঁরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করেন, তাঁদের বলতে চাই, স্থানীয় সরকারের কাজটা কী? এলাকার উন্নয়নের কাজ করে। ইউনিয়নের উন্নয়নে কাজ করে এবং অন্যান্য কাজকর্ম করে। মেম্বার হন কারা, যাঁরা ওয়ার্ডের নেতা, তাঁরা। তাঁদের দায়িত্ব কিন্তু জাতীয় কোনো দায়িত্ব নয়। সংসদ নির্বাচনের মধ্যে কী থাকে, দেশের উন্নয়ন, দেশের অর্থনীতি কেমন হবে, এগুলো থাকে। যাঁরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তাঁরা এই কাজগুলো করেন। নির্বাচিত সেই সরকার যে বাজেট করে, অর্থ বরাদ্দ দেয়, স্থানীয় সরকার সেগুলো দিয়ে কাজ করে। তাই বুঝতে হবে কোন নির্বাচনের গুরুত্ব বেশি।’
সংস্কারে বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আগে সংস্কার করবে পরে নির্বাচন, এটা হয় না। কোনো দিন কোনো অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংস্কার করতে পারে না। জনগণের নির্বাচিত সরকার যেকোনো সংস্কারকাজ সম্পাদন করতে পারে। ছয় মাস হয়ে গেছে, তারা তেমন কোনো কিছু করতে পারেনি। তাই আগামী নির্বাচনে যারা সরকার গঠন করবে, তারা সংস্কার করবে। তাই দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। যে দিন থেকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়ে যাবে, জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে। তখন কোনো ষড়যন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্রে কাজ হবে না।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতি, টাকা লুটের কারণে এ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বেড়েছিল। জনগণ আশা করেছিল এই সরকার এসে লাগাম ধরবে। কিন্তু সরকার পারেনি। যদি পারত, তাহলে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন হতে পারত না। ঢাকা ও চট্টগ্রামে যা ঘটেছে, তা ঘটত না।’
মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সিনহার সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ মো. আবদুল্লাহ, শহিদুল ইসলাম মৃধা, আবদুল বাতেন, সৈয়দ সিদ্দিক উল্লাহ, আমিরুল হোসেন প্রমুখ।