মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুলে ঝলসে দেওয়ার ঘটনায় হাসান আলীর স্ত্রী ও চাচাতো শ্যালকের মৃত্যুর পর চাচিশাশুড়িও মারা গেলেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
আজ বিকেলে এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাটুরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মর্তুজা তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল বুধবার বিকেলে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসান আলীর স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০) ও তাঁর চাচাতো শ্যালক সাটুরিয়া উপজেলার গওলা গ্রামের রুবেল হোসেন (২৮) মারা যান। আজ নিহত গৃহবধূ শারমিনের চাচি সেলিনা আক্তারও (৪৫) মারা যান।
এদিকে সাটুরিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, স্ত্রীসহ চাচাতো শ্যালক ও চাচিশাশুড়ির শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুনে ঝলসে দেওয়া এবং হত্যার দায়ে হাসান আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর শরীরও আগুনে দগ্ধ হয়। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে পুলিশি প্রহরায় তাঁর চিকিৎসা চলছে।
অগ্নিদগ্ধে নিহত শারমিন আক্তার ঢাকার ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের রাজাপুর কয়লা গ্রামের হাসান আলীর স্ত্রী। আর নিহত সেলিনা সাটুরিয়া উপজেলার গওলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী এবং নিহত রুবেল তাঁদের সন্তান।
এজাহার, সাটুরিয়া থানা-পুলিশ এবং ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৪ বছর আগে ধামরাইয়ের রাজাপুর কয়লা গ্রামের জিন্নাহ খানের ছেলে হাসান আলীর সঙ্গে সাটুরিয়ার গওলা গ্রামের মৃত আতাউর হোসেনের মেয়ে শারমিনের বিয়ে হয়। এই দম্পতির মো. রায়হান নামের ১০ বছরের এক ছেলেসন্তান রয়েছে। কয়েক বছর ধরে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ নিয়ে হাসান তাঁর স্ত্রী শারমিনকে অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন করছিলেন। এতে শারমীন স্বামীকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ছেলেকে নিয়ে শারমিন গওলা গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে আসেন।
গত শুক্রবার সকালে গওলা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে যান হাসান। সেখানেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে শারমিন পাশের চাচার বাড়িতে যান। সকাল ১০টার দিকে হাসান চাচাশ্বশুরের ঘরের ভেতর গিয়ে শারমিনের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় শারমিনের চাচি সেলিনা ও চাচাতো ভাই রুবেল তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে তাঁদের শরীরেও কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এতে শারমিন, তাঁর চাচি সেলিনা ও চাচাতো ভাই রুবেলের গায়ে আগুন ধরে যায়। পরে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ততক্ষণে তাঁদের তিনজনের শরীর আগুনে ঝলসে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও প্রতিবেশীরা তাঁদের উদ্ধার করে শিরিন ও রুবেলকে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আর শারমিনকে জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দুপুরে তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় গত রোববার শারমিনের ভাই শামীম হোসেন বাদী হয়ে হাসানকে আসামি করে সাটুরিয়া থানায় মামলা করেন।
সাটুরিয়া থানার এসআই গোলাম মর্তুজা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ শারমিন ও তাঁর চাচাতো ভাই রুবেল মারা যান। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে শারমিনের চাচি সেলিনাও মারা গেছেন।
এসআই মর্তুজা আরও বলেন, নিহত ব্যক্তিদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। সেখানে ময়নাতদন্তের পর তাঁদের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হবে। আসামি হাসানের শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয় বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো হলে আদালতে সোপর্দ করা হবে।