রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতায় এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে রাঙামাটির কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেছেন নিহত কলেজছাত্র অনিক কুমার চাকমার বাবা আদর সেন চাকমা। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়ের কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে অনিককে পেটানোর একটা ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে কয়েকজনের চেহারা দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ি ও বাঙালিদের দুই পক্ষে সংঘর্ষের সময় গত শুক্রবার সদরের কালিন্দীপুর এলাকায় অনিক চাকমাকে মারধর করা হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাঙামাটি জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ মো. ইমরান আজ রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে একটি মামলা হয়েছে। নিহত কলেজছাত্রের বাবা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় এখনো গ্রেপ্তার নেই।
শাহ মো. ইমরান আরও বলেন, রাঙামাটিতে শুক্রবারের সহিংসতা ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। সহিংসতার পর এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্রে করে গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামের এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুর পর সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই দিন সেখানকার পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে হত্যার প্রতিবাদে দীঘিনালায় বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বাঙালিদের অভিযোগ, মিছিলটি বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সংঘর্ষের একপর্যায়ে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, আগুনে দীঘিনালা বাসস্টেশন ও লারমা স্কয়ার এলাকায় ১০২টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে পাহাড়িদের ৭৮টি ও বাঙালির সম্প্রদায়ের ২৪টি দোকান রয়েছে।
দীঘিনালা উপজেলায় সংঘর্ষের জেরে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, পানছড়ি ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় তিনজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ২০ জন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল ত্রিপুরা (৩০)।
খাগড়াছড়িতে তিন পাহাড়ির মৃত্যু ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে রাঙামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন পাহাড়িরা। মিছিলে ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ ৩০ থেকে ৪০টি বাড়িঘর, দোকানপাটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অন্তত ৩০টি যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে ১ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন দুই পক্ষের অন্তত ৬০ জন। নিহত তরুণের নাম অনিক কুমার চাকমা। তিনি কর্ণফুলী ডিগ্রি কলেজের স্নাতকের ছাত্র।