সড়কের দুই পাশে গাছে দড়ি বেঁধে পথ রোধ করে ২ মোটরসাইকেল ছিনতাই

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর-শ্রীরামপুর সড়কের এই স্থানে সোমবার রাতে দুটি মোটরসাইকেল ছিনতাই হয়েছে। মঙ্গলবার লোকজন ঘটনাস্থল দেখছিলেন
ছবি: প্রথম আলো

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে একটি সড়কের দুটি গাছে রশি বেঁধে দুই মোটরসাইকেল চালকের পথ রোধ করে তাঁদের মোটরসাইকেল ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে চালক দুজনকে মারপিট করে হাত-পা বেঁধে ধানখেতে ফেলে রাখা হয়। গতকাল সোমবার রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আক্কেলপুর-শ্রীরামপুর সড়কের আক্কেলপুর পৌরশহরের বড় কালর্ভাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার দুই ঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে দাঁত দিয়ে একজন অপরজনের বাঁধন খুলে দেন।

ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরা হলেন, আক্কেলপুর হাস্তাবসন্তপুর মহল্লার মৃত মোজাম উদ্দিনের ছেলে শাওন হোসেন ও ইবনে সিনা ওষুধ কোম্পানি বিক্রয় প্রতিনিধি মঞ্জুরুল আলম। শাওনের ১০০ সিসি বাজাজ ও মঞ্জুরুল আলমের ডিসকভার মোটরসাইকেল ছিনতাই হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার রাত শ্রীরামপুর বাজার থেকে আক্কেলপুরে ফিরছিলেন। তিনি রাত ৯টার দিকে সড়কের ওই স্থানে পৌঁছে দুটি গাছে দড়ি বেঁধে রাখা দেখে মোটরসাইকেল থামান। তখন সড়কের দুই পাশের ধানখেতের ভেতর থেকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে আট থেকে ১০ জনের দুর্বৃত্তের একটি দল এসে তাঁকে মারধর করে সড়কের পূর্ব পাশের ধানখেতে নিয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে।

রাত ১০টার দিকে শাওন হোসেন মোটরসাইকেল নিয়ে আক্কেলপুর থেকে তাঁর শ্বশুরবাড়ি ভদ্রখালী গ্রামে যাচ্ছিলেন। সড়কের একই স্থানে দড়ি বাঁধা দেখে তিনি থামেন। এ সময় পথ রোধ করে তাঁকে মারপিট করে সড়কের পূর্ব পাশের ধান খেতে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়। সেখানে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুজন দুর্বৃত্তরা তাঁদের পাহারা দিচ্ছিলেন। পাহারারত দুই দুর্বৃত্ত রাত ১২টার পর সেখান থেকে চলে যায়। এরপর শাওন হোসেনের দাঁত দিয়ে মঞ্জুরুলের বাঁধন খুলে দেন। সেখান থেকে তাঁরা চলে এসে ঘটনাটি লোকজনদের জানান।

আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকজন উৎসুক ব্যক্তি ঘটনাস্থল দেখছিলেন। সেখানে সিগারেটের প্যাকেট ও ওয়ান টাইম চায়ের গ্লাস পড়েছিল।

ছিনতাইয়ের শিকার মনজুরুল আলম বলেন, ‘শ্রীরামপুর বাজার এলাকা থেকে কাজ শেষ করে আক্কেলপুর শহরে ফেরার সময় সড়কের দড়ি দিয়ে আমার পথ রোধ করা হয়। ওই সময় কয়েকজন মুখোশ পরা ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে আমাকে ধরে হাত-পা, চোখ ও মুখ বেঁধে সড়কের নিচে একটু দূরে ধানের জমিতে ফেলে রাখে। তাঁরা আমার ১০০ সিসির মোটরসাইকেল, ব্যাগে থাকা সাড়ে আট হাজার টাকা ও একটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়। ওই ঘটনার কিছু সময় পর আমার কাছে আরও একজনকে নিয়ে এসে তাঁকেও একইভাবে বেঁধে রাখে ছিনতাইকারীরা।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অপর ভুক্তভোগী শাওন হোসেন বলেন, ‘আমি রাত প্রায় ১০টার দিকে শ্বশুরবাড়ি ভদ্রকালীতে যাওয়ার সময় সড়কের দুই পাশের গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে আমার পথ রোধ করে ৮ থেকে ১০ জন দুর্বৃত্ত। তাঁদের মধ্য একজনের মুখে মাস্ক ছিল না। আমি চিৎকার দিলে তাঁরা আমাকে মারধর করে অস্ত্রের মুখে সড়কের নিচে ধানখেতে নিয়ে গিয়ে আমার হাত-পা, চোখ–মুখ বেঁধে আমার বাজাজ মোটরসাইকেল ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়। তাঁরা সেখানে আগে থেকে আরও একজনকে ধরে এনে বেঁধে ফেলে রেখেছিল। আমাদের দুজনকে দুই দুর্বৃত্ত পাহারা দিচ্ছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা পর দুর্বৃত্তরা সেখান থেকে চলে যাওয়ার রাত ১২টার পর দাঁত দিয়ে প্রথমে মঞ্জুরুলের হাতের বাঁধন খুলেছি। এরপর তিনি আমার বাঁধন খুলে দেন।’

রাতের বেলায় সড়কে পুলিশে টহল না থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। আক্কেলপুর পৌরশহরের হাস্তাবসন্তপুর মহল্লার বাসিন্দা দোলন হোসেন বলেন, আগে রাতের বেলায় উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় পুলিশ টহল দিচ্ছিল। এখন আর রাতের বেলায় সড়কগুলোয় পুলিশের টহল দেখা যায় না। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে ছিনতাই বেড়েছে।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছিনতাইয়ের ঘটনাটি রাতেই জেনেছি। পুলিশ অপরাধীদের কাজ করছে। বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় রাতের পুলিশের টহল আরও জোরদার করা হবে।’