যশোরে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
যশোরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হেলমেট দিয়ে পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এতে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ, যশোর সরকারি মহিলা কলেজ ও যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। আজ সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রেসক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও পরে শহরে মিছিল করেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হামলাকারী ব্যক্তিদের চিনতে পারেননি। তবে তাঁদের ধারণা, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এই হামলা করতে পারেন। কারণ, গতকাল রোববার থেকে আন্দোলনে নামলে হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।’ শহরজুড়ে থাকা সিসিটিভি দেখার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমি একটা মিটিংয়ে আছি। খোঁজখবর নিয়ে পরে জানাব।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, আজ দুপুর ১২টার দিকে যশোর সরকারি এমএম কলেজ, যশোর সরকারি মহিলা কলেজ, যশোর সিটি কলেজ ও যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা শহরের আদালত প্রাঙ্গণে খেজুরগাছ চত্বরে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তাঁরা গরীবশাহ সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের দিকে যান। মিছিলটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পৌঁছালে কয়েকজন দুর্বৃত্ত হেলমেট নিয়ে তাঁদের ওপর অতর্কিতে হামলা করে। এ সময় চাকরিপ্রত্যাশী মাসুম বিল্লাহসহ কয়েকজনকে হেলমেট দিয়ে পিটুনি দেওয়া হয়। মিছিলের সামনে মেয়েদের হাতে থাকা ব্যানার-ফেস্টুন টেনেহিঁচড়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী মাসুম বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশ্বস্ত করছিলেন, আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলে কোনো সমস্যা নেই। এ জন্য আজ তাঁরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচি দেন। গতকাল থেকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মেসেঞ্জারে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তিনি বলেন, ‘হামলাকারীদের কাউকে আমরা চিনতে পারিনি। তবে ছাত্রলীগের নেতারা যেহেতু হুমকি দিয়েছিলেন। তাই ধারণা করছি, ছাত্রলীগের কর্মীরাই হামলা করেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের বক্তব্য জানতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দীন কবিরের (পিয়াস) মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখেন। কর্মসূচিতে অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। এতে ব্যস্ততম সড়কটি বন্ধ হয়ে গেলে এ পথে চলাচলকারী ব্যক্তিরা ভোগান্তিতে পড়েন। মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে ২০ মিনিটের মতো অবরোধের পর অবরোধ তুলে নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। দড়াটানা মোড়ে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ যশোরে শান্তিপূর্ণ মিছিলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। হামলাকারী ব্যক্তিদের অবিলম্বে আটকের দাবি জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী যশোরেও আন্দোলন হবে।