জামালপুরে জমির নিবন্ধন ও নামজারি বন্ধ, ভোগান্তিতে মানুষ 

প্রায় এক মাস ধরে ভূমিসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জমির সর্বশেষ খতিয়ান সৃষ্টি ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ    করা যাচ্ছে না।

জমির নিবন্ধন ও নামজারি বন্ধ থাকায় লোকজন ভোগান্তিতে পড়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে জামালপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

সার্ভার সমস্যার কারণে জামালপুর সদর উপজেলায় অনলাইনে জমির খতিয়ান সৃষ্টি (মিউটেশন), ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা ও জমি ক্রয়-বিক্রয় করার কাজ করা যাচ্ছে না। এতে প্রায় এক মাস ধরে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ভূমিসেবা প্রায় বন্ধ রয়েছে।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে সারা দেশে ভূমিসেবা অনলাইন সার্ভার বন্ধ রয়েছে। সার্ভারের সফটওয়্যারগুলো ধীরগতিসম্পন্ন হওয়ায় ই-নামজারি (মিউটেশন), ভূমি উন্নয়ন কর ও খতিয়ান সেবা পেতে অসুবিধা হচ্ছে। সেবাপ্রাপ্তিতে গতি বৃদ্ধি করতে কাজ করা হচ্ছে। অনলাইন–সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ম্যানুয়াল তৈরি করে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এই কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করার কথা বলে সার্ভার বন্ধ রাখা হয়েছিল। ১ ডিসেম্বর থেকে সার্ভারটি পরীক্ষামূলক চালু করা হয়। পরীক্ষামূলক চালু হলেও ওই সব সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রায় এক মাস ধরে সদর উপজেলায় ভূমিসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত জমির সর্বশেষ খতিয়ান সৃষ্টি (মিউটেশন) এবং ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। পরে গত ১ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় পরীক্ষামূলক চালু করা হয়। কিন্তু সার্ভারে প্রবেশ করা গেলেও পরবর্তী সময়ে অ্যাকাউন্ট লগইন করা যাচ্ছে না। ফলে জমির সর্বশেষ খতিয়ান সৃষ্টি (মিউটেশন) ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা যাচ্ছে না।

গতকাল বুধবার সকালে পৌর ভূমি কার্যালয় ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয় দুটিতে সেবাগ্রহীতা নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিন ধরে সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় লোকজন এখন আর তেমন একটা আসেন না। কার্যালয় দুটি সুনসান। তবে কয়েকজন সেবাগ্রহীতাকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেল। তাঁদের মধ্যে শহরের হাটচন্দ্রা এলাকার বাবর আলী। বলেন, ৩৩ শতাংশ জমির নামজারি করবেন। এক সপ্তাহ ধরে ঘোরাঘুরি করছেন; কিন্তু নামজারি করাতে পারছেন না। কারণ, অনলাইন সার্ভারের সমস্যা। কবে ঠিক হবে, সেটাও ভূমি কার্যালয়ের লোকজন বলতে পারছেন না।

পৌর ভূমি কার্যালয়ে শহরের বগাবাইদ এলাকার রুবেল মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করবেন তিনি। কিন্তু এক মাস ধরে দু–এক দিন পরপর ওই কার্যালয়ে আসছেন। কিন্তু তিনি ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারছেন না। রুবেল বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে জমি বিক্রি করব। ক্রেতার সঙ্গে সবকিছু ঠিকঠাক করা হয়েছে। কিন্তু রেজিস্ট্রি করে দিতে পারছি না। কারণ, জমি রেজিস্ট্রি করতে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হয়। ওই কার্যালয়ে যাচ্ছি আর আসতেছি। কর্মকর্তারা বলছেন—সার্ভারে সমস্যা। কিন্তু কবে থেকে সার্ভার ঠিক হবে। সেটাও তাঁরা বলতে পারছেন না। এতে আমার মতো হাজারো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।’

উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ১৫টি ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে প্রতিদিন বহু লোক ভূমিসেবা পেতে যাতায়াত করে থাকেন। জমির কাগজপত্র ঠিক করা, ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া, ই-নামজারির কাজ করা, খতিয়ান সেবা নিতে ভূমি অফিসে যাওয়া শত শত মানুষ ‘অনলাইন সার্ভার বন্ধ, পরে আসেন’ এমন বক্তব্য শুনতে শুনতে হতাশ হয়ে পড়েছেন।

ভূমি কার্যালয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিরাশ হয়ে যাওয়া কেন্দুয়া ইউনিয়নের কোচগড় গ্রামের মো. রেজাউল করিম বলেন, ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে তিনি এক মাস হাঁটছেন, কিন্তু সার্ভারে কাজ করছে না শুনতে শুনতে হতাশ হয়ে গেছেন। বোনদের কাছ থেকে ওয়ারিশের জমি ক্রয় করার জন্য নামজারির কাজ করতে এসেছেন। নামজারি হচ্ছে না, বোনদের কাছ থেকে ওয়ারিশের জমিও নিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন রেজাউল।

পৌর ভূমি কার্যালয়ে শহরের বাগানবাড়ী এলাকার আবদুল আউয়ালের সঙ্গে কথা হয়। এক মাস থেকে উন্নয়ন কর দেওয়ার জন্য ঘুরছেন তিনি। আউয়াল বলেন, ‘একখণ্ড জমি কিনেছি। জমির মালিক আমাকে উন্নয়ন কর পরিশোধের দায়িত্ব দিয়েছেন। সার্ভার সমস্যার কারণে কর দিতে পারছি না, জমি রেজিস্ট্রিও হচ্ছে না। জমি বিক্রির টাকায় জমির মালিক ঋণ পরিশোধ করবেন। ঋণের চাপ বেড়ে যাচ্ছে জমির মালিকের ওপর। কিন্তু রেজিস্ট্রি ছাড়া আমিও টাকা দিতে পারছি না।’

সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হায়দার বলেন, ‘২৬ নভেম্বর থেকে সার্ভারের সফটওয়্যারের দ্বিতীয় সংস্করণের কাজ শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও কিছু সমস্যার কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে আমরা সেবা প্রদান করতে পারছি না। নামজারি ও রাজস্ব আদায়ও ব্যাহত হচ্ছে। তবে খুব দ্রুতই সার্ভারের সফটওয়্যার সচল হবে বলে আশা করছি।’

একই কথা বলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুমী আক্তার। তিনি জানান, ভূমি–সংক্রান্ত সার্ভারের সফটওয়্যারটির অটোমেশনের কাজ শেষে পরীক্ষামূলক চালু হয়েছে। কিছু জটিলতা থাকায় কাজে একটু সমস্যা হচ্ছে। এই সপ্তাহে সার্ভারের সফটওয়্যারটি সচল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।