প্রশাসনের যোগসাজশে নৌকা প্রতীকের জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগাতিপাড়ায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ভোট গ্রহণ ও গণনায় অনিয়মের ব্যাখ্যা দিয়ে ১৭টি কেন্দ্রের ভোট পুনঃ গণনার দাবি জানিয়েছেন।
সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামকে মাত্র ২ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম (ঈগল প্রতীক)। আবুল কালাম সাবেক সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ৭৭ হাজার ৯৪৩ ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম (নৌকা প্রতীক) পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৯৪৭ ভোট।
সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে নৌকার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ভোট গ্রহণ ও গণনায় নানা অনিয়ম করেছেন। ভোটের দিন সকালে তিনি লালপুরের চংধুপইল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী ওই ইউপির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান নিয়ে ভোটারদের ঈগল প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করছেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। তখন তারা তাঁকে আটক করলেও ভোট গ্রহণ শেষে ছেড়ে দেয়।
শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্র থেকে খবর আসতে থাকে, প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের কাছ থেকে জোর করে ফাঁকা রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর নিয়েছেন। পরে ভোট গণনায় অনিয়ম করলে তাঁরা আপত্তি জানান। কিন্তু প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা আপত্তি আমলে নেননি। তিনি বলেন, প্রথমে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের একটা তালিকা করা হয়েছিল। সেই তালিকা তাঁরা যাচাই-বাছাই করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ নতুন ইউএনও এসে উপজেলার বাইরে থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। কিন্তু সেই তালিকা তাঁকে দেখতে দেওয়া হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসবের আমি কিছুই জানি না। যে কেউ অভিযোগ দিতেই পারেন। তবে অভিযোগের সত্যতা আছে কি না, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যক্ষ ইউনুস আলী, বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শহিদুল ইসলাম রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে ১৭টি ভোটকেন্দ্রের ভোট পুনঃ গণনার দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। সেগুলো হলো লালপুর উপজেলার শোভ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আবদুলপুর সরকারি কলেজ, চংধুপইল ইউনিয়ন পরিষদ, নেংগপাড়া দারুল সুন্নাত দাখিল মাদ্রাসা, বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,আবদুলপুর মোশারফ হোসেন উচ্চবিদ্যালয়, আড়বাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোদাগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লক্ষণবাড়িয়া চৌমুহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধুপইল উচ্চবিদ্যালয়, রায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করমদোসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৈপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঁশবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয় ও রহিমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র।