‘ঈদের দিনও চিড়া-মুড়ি খাইয়া দিন কাটাইছি’

সিলেট নগরের মীরাবাজার এলাকার কিশোরী মোহন (বালিকা) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে বসে আছেন মজিদা বেগম ও তাঁর নাতি। আজ বুধবার সকালেছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের যতরপুর এলাকা কিছুটা নিচু। টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হলেই এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা যায়। ১৫ দিনে এলাকাটি পাঁচবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। যতরপুর এলাকার একটি কলোনিতে মেয়ে ও দুই নাতি-নাতনি নিয়ে থাকেন মজিদা বেগম (৫০)। জলাবদ্ধ হয়ে পড়লে তাঁরা নগরের মীরাবাজার এলাকার কিশোরী মোহন (বালক) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেন। সেখানেই চিড়া-মুড়ি খেয়ে ঈদ কাটিয়েছেন মজিদারা। আজ বুধবার সকালে বিদ্যালয়টির নিচতলায় মজিদা বেগমের সঙ্গে আলাপকালে এসব বিষয় জানা যায়।

আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলার একটি বেঞ্চে বসে মজিদা বেগম ও তাঁর দুই বছরের নাতি মোজাহিদ আলী বাইরে বৃষ্টি দেখছিলেন। আজ সকালে সেখানে আলাপকালে মজিদা বলেন, ‘ঈদের দিন তনে (থেকে) আশ্রয়ে আছি। আইজ তিন দিন হয়ে গ্যালো। সিটি (সিটি করপোরেশন) একবার খালি চিড়া-মুড়ি দিছে। ঈদের দিনও চিড়া-মুড়ি খাইয়া দিন কাটাইছি।’

মজিদা বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায়। স্বামী মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। তাঁর স্বামীর বাড়িতে জায়গাজমি নেই। পরিবারে এক মেয়ে। সাত বছর আগে মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। মেয়ের স্বামীও মেয়েকে ফেলে চলে গেছেন। এখন দুই বছরের এক নাতি ও পাঁচ বছরের এক নাতনিকে নিয়ে সংসার। মজিদা এখন আর কাজ করেন না। তাঁর মেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। মেয়ের আয়েই চলে সংসার। তাঁর মেয়ে যেসব বাড়িতে কাজ করতেন, সেসব বাড়ির লোকজন ঈদে বাড়ি চলে গেছেন। তাই জমানো টাকা খরচ করে চলছেন তাঁরা। সামনে কী অবস্থা হবে, তা নিয়ে চিন্তিত বলে জানালেন মজিদা।

মজিদাদের মতো একই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ৪০টি পরিবার। তারা সবাই যতরপুর এলাকার কলোনিতে থাকে। আক্ষেপ করে কয়েকজন জানান, বৃষ্টি হলেই কলোনিতে পানি বেড়ে যায়। ২০২২ সালে সর্বশেষ পানি উঠেছিল বুকসমান। এরপর এবারও সেই একই পরিমাণে পানি উঠেছে। এলাকাটি নিচু হওয়ায় বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায়। কলোনির মালিক ঝড়বৃষ্টি, বন্যা—কিছুই বুঝতে চান না। ঘরে থাকলেও ভাড়া দিতে হয়, না থাকলেও ভাড়া দিতে হয়।

কিশোরী মোহন (বালিকা) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে। আজ বুধবার সকালে সিলেট নগরের মীরাবাজার এলাকার
ছবি: প্রথম আলো

৫২ বছর বয়সী কলোনির আরেক বাসিন্দা আক্কাস মিয়া বলেন, গরিব মানুষেরাই কলোনিতে থাকেন। টাকাপয়সা বেশি থাকলে তাঁরাও কলোনিতে থাকতেন না। কলোনিতে কয়েক দিন পরপরই পানি ওঠে। কিন্তু কলোনির মালিক কলোনির ঘরগুলো উঁচু করার কোনো ব্যবস্থা করেন না।

সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দায়িত্বে নগরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া শুকনা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টির বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, মীরাবাজার এলাকার কিশোরী মোহন (বালিকা) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আজ পরিদর্শনে যাবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। এ সময় তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজনদের ত্রাণ সহায়তা দেবেন।