৯ ছাত্রীর বহিষ্কার বাতিল ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের দেওয়া বহিষ্কারাদেশ বাতিল ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনেছবি: প্রথম আলো

৯ ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ বাতিল ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ তিন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই কর্মসূচি হয়। ওই ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুই সহ–উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয় রয়েছে।

অবস্থান কর্মসূচিতে ‘ছাত্র–জনতার দেওয়া ক্ষমতা নিজ স্বার্থে অপব্যবহার বন্ধ করো’; ‘বহিষ্কারাদেশ বাতিল করো’ ইত্যাদি স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ তন্ময় বলেন, ‘বহিষ্কারের চিঠিতে ছয়টা অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয় নম্বরটিতে বলা হয়েছে অন্যান্য অপরাধ। এটা আসলে কী? এটা খুবই প্রহসনমূলক চিঠি। আবার বলা হয়েছে হলের গেট ভাঙার কথা। এখন প্রশ্ন, গেট বন্ধ থাকবে কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে কি সান্ধ্য আইন রয়েছে? কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল?’

ইমতিয়াজ তন্ময় বলেন, ‘শিক্ষার্থী হিসেবে আমি স্বচ্ছতা চাই। আমি জানতে চাই, ঠিক কোন প্রমাণে এসব অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়। কিছু ভিডিও ফুটেজ তো আমরাও দেখেছি, যেখানে কিছু শিক্ষক অশালীন ভাষায় কথা বলছেন। কোনো শিক্ষক কি কাউকে গালাগাল করতে পারেন? বলা হয়, শিক্ষকেরা আমাদের অভিভাবক। কিন্তু তাঁরা কেন সত্যিকার অর্থে অভিভাবক হয়ে উঠতে পারলেন না?’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী ঈশা দে বলেন, ‘প্রতিটি চিঠি কপি–পেস্ট আকারে লেখা। ১০ জনকে বলা হয়েছে বিশৃঙ্খলার নেতৃত্ব দান করেছেন। ১০ জন কীভাবে নেতৃত্ব দেন? আমরা চাই, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। বহিষ্কারাদেশ বাতিল হোক। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের যেসব স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে, এর প্রতিটা ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। প্রক্টরদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।’

১৩ ফেব্রুয়ারি জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের (বর্তমানে বিজয় ২৪ হল) ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমে জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এর ২০ দিন পর বহিষ্কারাদেশের চিঠি বিভাগ ও হলে পৌঁছায়। ৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ছাত্রী হলের সামনে রাখা নৌকা আকৃতির বসার স্থান ভাঙচুর করতে যাওয়া কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিতণ্ডাও হয়েছিল আবাসিক ছাত্রীদের।

ছাত্রীদের অভিযোগ, মধ্যরাতে একদল শিক্ষার্থী হলে এসে ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। এসব ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডিকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এ কারণেই তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে সহকারী প্রক্টর কোরবান আলীকে শারীরিক লাঞ্ছনা করতে দেখা গেছে এক ছাত্রীকে। এ ছাড়া কয়েকটি ভিডিওতে প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক সদস্যকে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা যায়।

এর মধ্যে সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায় ছাত্রীদের বহিষ্কার করতে প্রশাসনকে চাপ দিতে ‘অনুগত’ ছাত্রদের বলেছিলেন দুই সহকারী প্রক্টর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এসব নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া এসব স্ক্রিনশটে ছিল সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নুরুল হামিদের সঙ্গে তাঁদের ‘অনুগত’ ছাত্রদের কথোপকথন।