হিরো আলমের সংবাদ করায় যুবলীগ নেতার হামলার শিকার ২ সাংবাদিক
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে হেরে যাওয়া আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবেদন করায় দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে জেলা যুবলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম ওরফে শিপুলের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের সাতমাথাসংলগ্ন টাউন ক্লাবে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার সাংবাদিকেরা হলেন বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি জে এম রউফ এবং স্থানীয় দৈনিক বগুড়ার স্টাফ রিপোর্টার জহুরুল ইসলাম। এ ঘটনায় বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্ত শরিফুলকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতিসহ সাংবাদিক নেতারা মৌখিক অভিযোগ দিতে আমার কার্যালয়ে এসেছিলেন। আমি তাঁদের থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাংবাদিক জে এম রউফ বলেন, উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন রাত সাড়ে ১০টায় ফল পাল্টানোর অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেন। টাউন ক্লাবে বসে তিনি ওই প্রতিবেদন লিখছিলেন। এ সময় কালবেলার প্রতিবেদক প্রদীপ মহন্ত এবং দৈনিক বগুড়ার প্রতিবেদক জহুরুল ইসলাম ছাড়াও আরও দুই বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম ক্লাবে এসে বসেন। তিনি হিরো আলমের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবেদন লেখা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে তাঁর চুলের মুঠি ধরে মারধর করেন শরিফুল।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রদীপ মহন্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘চুলের মুঠি ধরে জে এম রউফকে ক্লাবের বাইরে বের করলে আমরা শরিফুলের হাত থেকে রউফকে রক্ষার চেষ্টা করি। একপর্যায়ে তিনি রউফকে ছেড়ে দেন। একটু পরে সাংবাদিক জহুরুলের ওপর দ্বিতীয় দফা হামলা করা হয়।’ জহুরুল ইসলাম বলেন, শরিফুল গলা চেপে ধরলে তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে অন্যরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে পুলিশ ডাকলে শরিফুল দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘হিরো আলমের সংবাদের জন্য নয়; অন্য মতাদর্শের লোকজন নিয়ে ওঠাবসার জন্য উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিক রউফের ওপর চড়াও হয়েছি। ভুলবশত এটা হয়েছে। এ জন্য তাঁর কাছে ক্ষমাও চেয়েছি।’
বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জে এম রউফের ওপর হামলায় জড়িত যুবলীগ নেতার গ্রেপ্তারের জন্য সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার বলেন, ‘শরিফুল জেলা যুবলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি। বিষয়টি জানার পর সাংবাদিক রউফের কাছে তাঁকে ক্ষমা চাইতে ও প্রেসক্লাবের নেতাদের সঙ্গে বসে মিটমাট করতে বলেছি।’
হামলার ঘটনায় নিন্দা ও গ্রেপ্তার দাবি
সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক রউফের ওপর হামলার ঘটনায় উপনির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আশরাফুল হোসেন নিন্দা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম ও বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি আমজাদ হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে হামলাকারী যুবলীগ নেতাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়া (জেইউবি), বগুড়া ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনও অভিযুক্ত যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।