পার্ক রক্ষায় নেই পর্যাপ্ত জনবল

মৌলভীবাজারে বর্ষিজোড়া ইকোপার্কের ভেতরে চলাচলের সড়ক। গত শুক্রবার তোলাপ্রথম আলো

‘বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক’ ঘোষণা হয়েছে দুই দশকের কাছাকাছি। এখনো পার্কটিতে গড়ে ওঠেনি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা। ইকোপার্ক রক্ষা ও ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় জনবল নেই। প্রায় ৯০০ একরের ইকোপার্কটি চলছে মাত্র তিনজনের লোকবল দিয়ে।

ইকোপার্কের চারপাশে জনবসতি থাকলেও জনসাধারণের অবাধ চলাচল রোধে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নেই। মৌলভীবাজার শহরের কাছে ছায়ানিবিড় ইকোপার্কটির অবস্থান হলেও সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার অভাবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেনি।

বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় মিশ্র চিরহরিৎ প্রাকৃতিক বনে গড়ে তোলা হয়েছে বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক। বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ২০০৬ সালে সংরক্ষিত এই বনভূমিকে ইকোপার্ক ঘোষণা করা হয়। ইকোপার্কটির আয়তন ৮৮৭ একর।

ইকোপার্ক নিয়ে লং টার্ম পরিকল্পনা দরকার। আমরা একটা পরিকল্পনা জমা দিয়েছিলাম। সেই আলোকে একটা মাস্টারপ্ল্যান নেওয়া হচ্ছে।
মো. জাহাঙ্গীর আলম, সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা

বর্ষিজোড়া ইকোপার্কে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধার জন্য ২০০৬-০৭ অর্থবছরে দুটি দুই কক্ষবিশিষ্ট ইকোকটেজ, চারটি পিকনিক স্পট, দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, চারটি নিরাপত্তাচৌকি, পাঁচটি গণশৌচাগার, একটি টিকিট কাউন্টার ও একটি তোরণ নির্মাণ করা হয়। এতে প্রায় সোয়া কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু জনবলসংকটে ইকোপার্কটি চালু হয়নি। ইকোকটেজসহ অন্যান্য অবকাঠামো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। সুযোগ-সুবিধা না থাকা ও নিরাপত্তার অভাবে শহরের এত কাছে হওয়া সত্ত্বেও পর্যটকদের ইকোপার্কটি আকর্ষণ করতে পারেনি। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় ইকোপার্কটি অনেকটাই অরক্ষিত অবস্থায় আছে।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট শাহীন আলম গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, দিনে হঠাৎ দু-একজন পর্যটক ঘুরতে আসেন।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে লাউয়াছড়া-সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও বর্ষিজোড়া ইকোপার্কে বনায়ন ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প নামের একটি প্রকল্প পরিকল্পনা বন অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছিল। এতে বলা হয়, অনেক মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ বন্য প্রাণী এ অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে। অনেক প্রজাতি বিরল ও বিপন্ন হিসেবে টিকে আছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যমান বন্য প্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় এই বনভূমিগুলোতে বনের আচ্ছাদন বাড়ানো প্রয়োজন। বনাঞ্চলগুলোকে বন্য প্রাণীর উত্তম আবাসস্থলে পরিণত করতে বনজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ করা, বেতবাগান তৈরি, সহযোগী প্রাকৃতিক উদ্ভিদ পুনরুৎপাদনের পরিবেশ তৈরি প্রয়োজন। পরিবেশবান্ধব পর্যটনের জন্য পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ, গাছপালার সঙ্গে পরিচয়ের ব্যবস্থা, পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি আর অগ্রসর হয়নি।

গত শুক্রবার বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক ঘুরে দেখা গেছে, ইকোপার্কের ভেতরের পথ দিয়ে ইকোপার্ক-সংলগ্ন গ্রামের মানুষ চলাচল করছেন। ইকোপার্কের কড়ালি টিলা, হিরনের কুচি ও গোয়ালাবাড়ি এলাকায় ইউক্যালিপটাস, অ্যাকাশিয়া, বিস্তীর্ণ শাল বনসহ চেনা-অচেনা বুনো গাছের নিবিড়তা আছে। হিরনের কুচি এলাকায় অনেকগুলো মরা আকাশমণি দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে এক ফুট, দু-তিন ফুট উঁচু গাছের গোড়া পড়ে আছে। কিছু গাছের কাটা অংশে বন বিভাগের নম্বর দেওয়া। পুরোনো মুথাও কিছু আছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে ওঠার লোহার সিঁড়ি ভেঙে আছে।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ফরেস্টার বর্ষিজোড়া ইকোপার্কের বিট কর্মকর্তা আবু নঈম মো. নুরুন্নবী গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনবল বাড়ানো দরকার। তিনজন স্টাফের পক্ষে এত বড় এলাকা কাভার সম্ভব হয় না। চারদিকে জনবসতি। সীমানাপ্রাচীর নেই। পার্কের ভেতর দিয়ে সড়ক। রাত-দিন মানুষ যাতায়াত করেন। বিকল্প পথ প্রয়োজন।’

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ইকোপার্ক নিয়ে লং টার্ম পরিকল্পনা দরকার। আমরা একটা পরিকল্পনা জমা দিয়েছিলাম। সেই আলোকে একটা মাস্টারপ্ল্যান নেওয়া হচ্ছে।’