সাটুরিয়ায় ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় হামলা, শিক্ষক আহত

সাটুরিয়ায় ছাত্রীদের উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় এক শিক্ষককে মারধর করেছে দুই বখাটে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। বুধবার সকালে শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় বখাটেরা এক শিক্ষকের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে ওই শিক্ষক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আজ বুধবার বিকেলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে দুই তরুণের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। অভিযুক্ত ওই দুই তরুণ হলেন উপজেলার হরগজ বালুচর গ্রামের আল আমিন (২২) ও একই এলাকার রমজান আলী (২৩)।

পুলিশ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হরগজ এলাকায় শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে যাওয়া–আসার পথে বিদ্যালয়ের সামনেই ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতেন আল আমিন, রমজানসহ কয়েক তরুণ। ছাত্রীরা বিষয়টি একাধিকবার শিক্ষকদের জানিয়েছে। পরে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেনসহ অন্য শিক্ষকেরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান এবং তাঁদের সতর্ক করে দেন। এ ঘটনার জের ধরে আজ সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেনকে মারধর করেন আল আমিন ও রমজান। এ ঘটনায় আহত শিক্ষককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান জানান, বিদ্যালয় চলাকালে পাশের চায়ের দোকানে প্রায়ই আড্ডা দেয় আল আমিন, রমজানসহ কয়েক বখাটে। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে তারা ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। এসব ঘটনা ছাত্রীরা একাধিকবার তাঁদের জানালে তাঁরা বখাটেদের শাসন করেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বজলুর রহমান বলেন, আজ সকাল নয়টার দিকে ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেনকে অজ্ঞাত মুঠোফোন নম্বর থেকে কল করেন আল আমিন। তিনি তখন জানান, তাঁর সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাবেন। এ বিষয়ে কথা বলতে চান। সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের সামনে চায়ের দোকানে যাওয়ার পর শিক্ষক তোফাজ্জলকে আল আমিন ও রমজান এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকেন। এতে শিক্ষকের মুখমণ্ডল কেটে গেলে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যান তাঁরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মামুন উর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই শিক্ষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর বাঁ চোখের ওপরে দুটি ও নিচে একটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তবে চোখ ভালো আছে। তিনি হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন এবং শঙ্কামুক্ত।

ভুক্তভোগী শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুলের সামনে ছেলেপেলেরা ঘোরাঘুরি করে। কখনো কখনো তারা স্কুলের মেয়েদের ইভ টিজিং করে। আমরা শিক্ষকেরা ছেলেদের নিষেধ করি। মেয়েদেরও সচেতন করি। ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ওই দুই বখাটে আমাকে মারধর করে।’

এদিকে শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তারা এই কর্মসূচি পালন করে। এতে হামলাকারী বখাটে দুই তরুণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আ খ ম নুরুল হক বলেন, শিক্ষক মারধরের ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও কষ্টকর। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী তরুণদের বিরুদ্ধে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

ঘটনার পর থেকে আল আমিন ও রমজান পলাতক। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।