দিনাজপুর–১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীলের আয় বেড়ে ২২ গুণ

মনোরঞ্জন শীল গোপালছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে ২০০৫ সালে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (হুঁকা প্রতীক) হয়ে জয় পেয়েছিলেন মনোরঞ্জন শীল গোপাল। নির্বাচিত হয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে। অটোরিকশায় চড়ে একজন সংসদ সদস্যের অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার বিষয়টি সেদিন বিভিন্ন গণমাধ্যম ঘটা করে প্রচার করেছিল। সেই নেতা এখন চড়ছেন ৪০ লাখ টাকার গাড়িতে। হয়েছেন জমি ও প্লটের মালিক।

গত ১৫ বছরে এই সংসদ সদস্যের আয় বেড়ে ২২ গুণ হয়েছে। নগদ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৯৬ গুণ। পাশাপাশি তাঁর স্থাবর–অস্থাবর সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে।

২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোরঞ্জন শীল তাঁর হলফনামায় স্থাবর সম্পদ বলতে কেবল ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের দিনাজপুরের কাহারোলে একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করেছিলেন। আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় কৃষি ও অকৃষি মিলিয়ে ১৬ একর জমি থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য এর মধ্যে ৬ একর কৃষিজমি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। এ ছাড়া রাজউকে ৯ কাঠার একটি প্লট আছে তাঁর।

পেশায় সম্পাদক ও ব্যবসায়ী এই সংসদ সদস্যের চারটি হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নবম সংসদ নির্বাচনের সময় মনোরঞ্জন শীলের কাছে ৫০ হাজার টাকা ছিল। পাঁচ বছর পর তাঁর নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ৮৫৭ টাকা; তারও পাঁচ বছর পর ২০১৮–তে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এসে তাঁর নগদ টাকা কমে দাঁড়ায় ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৬১। এবারের নির্বাচনে তাঁর হাতে নগদ আছে ৯৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪২৭ টাকা। কেবল দশম সংসদ নির্বাচনের সময় মনোরঞ্জন শীলের স্ত্রীর কাছে নগদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা ছিল।  

মনোরঞ্জন শীল দিনাজপুর-১ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। রাজনৈতিক জীবনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) অনুসারী ছিলেন। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জয় পান। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেনি। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে আওয়ামী লীগে যোগদান করে পরপর তিনবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।

নবম সংসদ নির্বাচনী হলফনামায় মনোরঞ্জন শীল পেশা দেখিয়েছিলেন ঠিকাদারি ও একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক (দৈনিক পত্রালাপ)। বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দশম নির্বাচনী হলফনামায় পেশা ছিল শুধু সম্পাদক। সে সময় তাঁর আয়ের কোনো উৎস ছিল না। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সম্পাদক পেশার সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যবসা ও কৃষি। দ্বাদশ নির্বাচনী হলফনামায় সম্পাদক, ব্যবসা, কৃষি ও সংসদ সদস্যের পারিতোষিক হিসেবে পাওয়া অর্থের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। বর্তমানে কৃষি খাত, সংসদ সদস্য হিসেবে পাওয়া পারিতোষিক ও ভাতার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৮৯ টাকা।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরোনো গাড়ি বিক্রি করা হয়েছে বিধায় নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে। পৈতৃক জমি প্রাপ্তির কারণে কৃষিজমি বেড়েছে।’