মহেশখালীতে ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ পানের বরজ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা
দুই মাস আগে ২০ শতক জমিতে পানের বরজ করেছিলেন কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা এলাকার পানচাষি রফিকুল ইসলাম। চাষে খরচ হয় প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যার বেশির ভাগই জোগাড় করেছেন ধারদেনা করে। দুই সপ্তাহ পর তাঁর বরজ থেকে পান বিক্রি শুরু হওয়ার কথা। রফিকুল ইসলামের আশা ছিল পান বিক্রি শুরু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে দেনা শোধ করবেন। তাঁর সেই আশা পূরণ হওয়ার আর সুযোগ নেই। গত মঙ্গলবার রাতে ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গেছে তাঁর পানের বরজ। রফিকুল ইসলামের মতো একই দশা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের অধিকাংশ পানচাষির।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে উপজেলাটিতে ৫০০ হেক্টর পানের বরজ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৫০০ হেক্টর পানের বরজ।
কালারমারছড়া ইউনিয়নের অফিস পাড়ার বাসিন্দা মো. সাইফুদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে তাঁর ১৫ শতক জমির পানের বরজ পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বরজের জন্য দুই লাখ টাকা খরচ করেছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার শাপলাপুর, হোয়ানক, কালারমারছড়া ও ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশের বরজগুলোর প্রায় সব কটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত বরজের ভেঙে পড়া বাঁশের মাচা মেরামত করছেন।
কালারমারছড়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ কাইছার উদ্দিন বলেন, দুই মাস আগে কালারমারছড়ার অন্তত ৩০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করেন চাষিরা। এর মধ্যে ১০০ হেক্টর পানের বরজ ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক চৌধুরী বলেন, তাঁর এলাকার অধিকাংশ মানুষ কয়েক যুগ ধরে পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এলাকার চাষিদের প্রধান পেশা পান চাষ। তাঁর এলাকায় পাঁচ হাজার পানের বরজ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চাষিদের ঘরে ঘরে আহাজারি চলছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ হেক্টরই হয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে। উপজেলায় পানের বরজের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। চাষি রয়েছেন অন্তত ২৮ হাজার। প্রতি হেক্টর জমিতে পান চাষ করতে চাষিদের খরচ হয় প্রায় ৪৮ লাখ টাকা। প্রতি হেক্টরে পান বিক্রি করে প্রায় ৯৮ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এতে চাষিরা খরচ বাদ দিয়ে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৪০ লাখ টাকা লাভবান হন। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের কারণে অনেক চাষি ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়বেন। ঘূর্ণিঝড়ে কৃষি খাতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিরুল আলমের নেতৃত্বে ২৫ কর্মী কাজ করছেন।
জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিরুল আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে পানচাষিদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত আংশিক-পুরোপুরি মিলিয়ে ৯০০ হেক্টর পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য মিলেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।