বাঁচার জন্য চিৎকার করছিলেন তাঁরা, আগুন নেভার পর মিলল অঙ্গার মরদেহ

পুড়ে যাওয়া রান্নাঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাঁড়ি–পাতিল
ছবি: প্রথম আলো

অগ্নিকাণ্ডের কিছুক্ষণ পর পুরো শরীরে আগুনসহ রান্নাঘরের দরজা ভেঙে বেরিয়ে আসেন খোকন বসাক। তখন খোকনের মা–বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান চিৎকার করছিলেন ঘর থেকে তাঁদের বের করার জন্য। কিন্তু আগুনের জন্য কেউ ঢুকতে পারছিলেন না। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এক কক্ষ থেকে পাঁচজনের অঙ্গার দেহ উদ্ধার করেন।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের মহাজনপাড়ার বাসিন্দা রাজু বিশ্বাসের কাছে পাওয়া গেল এ বর্ণনা। গ্রামটিতে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আগুনে পুড়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন একজন। আগুন লাগার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছিলেন রাজু।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় মধ্যরাতে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া একই পরিবারের পাঁচজন
ছবি: সংগৃহীত

মৃত ব্যক্তিরা হলেন মহাজনপাড়া এলাকার কাঙ্গাল বসাক (৬৮), তাঁর স্ত্রী ললিতা বসাক (৫৭), পূত্রবধূ লাকি বসাক (৩৩), নাতি সৌরভ বসাক (১২) ও ছেলে শায়ন্তী বসাক (৬)। আগুনে দগ্ধ কাঙ্গাল বসাকের ছেলে খোকন বসাককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, আধা পাকা বাড়ির চারদিকে পোড়া গন্ধ। বাড়ির দেয়াল ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। চারটি কক্ষের আসবাব পুড়ে গেছে। আলমারির নতুন কাপড়-চোপড়ও পুড়েছে। রান্নাঘরের চুলার হাঁড়ি–পাতিল ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। পোড়া বাড়ির পাশের বাড়ির উঠানে আহাজারি করছেন স্বজনেরা। ঘরের পাশে মৃতদের সৎকারের জন্য আমগাছ কেটে তৈরি করা হচ্ছে।

এক রাতে মেয়ে, নাতি–নাতনিকে হারিয়ে চিনু দে’র আহাজারি। আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়
ছবি: প্রথম আলো

আগুনে মেয়ে ও নাতি-নাতনির মারা যাওয়ার খবর পেয়ে চট্টগ্রাম নগরের ঝালতলা থেকে ভোরেই ছুটে এসেছেন চিনু দে। আহাজারি করতে করতে তিনি বলছিলেন, লাকি বলে এখন কাকে ডাকবেন? কার বাড়িতে বেড়াতে আসবেন?

আরও পড়ুন

লাকির বড় বোন মনি দে ও ছোট বোন ঝর্ণা দেও খবর শুনে এসেছেন। কয়েক দিন পর একসঙ্গে রাঙামাটি বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল তিন বোনের। আহাজারি করতে করতে তাঁরা বলছিলেন, এখন কাকে নিয়ে বেড়াতে যাবেন?

খোকনের প্রতিবেশী স্বপন শীল (৫০) বলেন, ঘরের পাশে মন্দিরে গত রাতে কীর্তনের আয়োজন করা হয়েছিল। খোকনই ছিলেন এর প্রধান উদ্যোক্তা। তিনি নিজেও কীর্তন করেন। কীর্তন শেষে খাবার খেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।

পুড়ে যাওয়া বাড়ির উঠানে স্বজনদের আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান সুমন প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। যখন আগুন লাগে, তখন পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোররাত ৪টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বাড়ির রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘটনাস্থলে কথা হয় রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহবুব মিলকির সঙ্গে। তিনি বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।