এক আত্মীয়ের জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাচ্ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসাশিক্ষক মোখলেছুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী উম্মে কুলসুম। একটি কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁদের অটোরিকশাটির সঙ্গে যাত্রীবাহী একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে আত্মীয়ের জানাজায় অংশ নিতে যাওয়া দম্পতি নিজেরাই বাড়িতে ফেরেন লাশ হয়ে। তাঁদের সঙ্গে অটোরিকশার চালকসহ আরও চারজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
মোখলেছুর রহমান ও উম্মে কুলসুমের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আলিনাপাড়া গ্রামে। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সদর উপজেলার ভাতশালা জোড়া পাম্প এলাকায় শেরপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনায় তাঁরা মারা যান। তাঁদের সঙ্গে নকলা উপজেলার গণপদ্দী ইউনিয়নের কিংকরপুর গ্রামের মো. শাহজাহান আকন্দের ছেলে মো. কামরুজ্জামান (ইমন) ও মেয়ে মাইসা তাসনিম (মিম), অটোরিকশাচালক লোকমান হোসেন ও নকলার চিথলিয়া বল্লাবাড়ি গ্রামের সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসের স্ত্রী বেসরকারি সংস্থার কর্মী নিনা রানী বিশ্বাসও (৪০) নিহত হন।
মা-বাবার দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সদর থানা প্রাঙ্গণে ছুটে আসেন মোখলেছুর ও উম্মে কুলসুম দম্পতির মেয়ে কলেজশিক্ষক মনুয়ারা বেগম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এক স্বজনের জানাজায় অংশ নিতে মা–বাবা শ্রীবরদী উপজেলার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনায় তাঁর মা–বাবার প্রাণ গেল। স্বজনের জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে নিজেরাই লাশ হলেন। এ কষ্ট রাখবেন কোথায়?
আজ বিকেলে সদর থানার সামনে কথা হয় নিহত দুই ভাই–বোনের চাচা সেনাসদস্য আতিকুর রহমানের সঙ্গে। অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইমন ও মিমকে তিনি কোলে-পিঠে বড় করেছেন। দুজনই ছিল তাঁর খুব আদরের। সামনে মিমের পরীক্ষা। তাই কলেজ থেকে প্রবেশপত্র আনতে বড় ভাই ইমনকে সঙ্গে নিয়ে অটোরিকশায় বাড়ি থেকে কলেজে যাচ্ছিল তারা। পড়ালেখা শেষ করে দুই ভাই–বোন সরকারি চাকরি করতে চেয়েছিল। এক দুর্ঘটনা তাদের সব স্বপ্ন শেষ করে দিল।
নিহত কামরুজ্জামান চলতি বছর শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে রসায়ন বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শেষ করেন। তাঁর ছোট বোন মাইসা তাসনিম একই কলেজে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সদর উপজেলার মধ্যবয়ড়া এলাকার জিনোম হাসপাতালে ছিল নিহত নিনা রানী বিশ্বাসের লাশ। মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে বৃদ্ধা মা মিলন রানী বিশ্বাস ও বাবা মালু চন্দ্র বিশ্বাস ছুটে আসেন হাসপাতালে। হাসপাতালের বারান্দায় বসে আহাজারি করছিলেন মা মিলন রানী। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েই আমগরে দেখাশোনা করত। টাকাপয়সা দিত। অহন আমগরে দেখব কে? চিকিৎসার জন্য টাকাপয়সা দিব কে?’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুবায়দুল আলম সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। বাস ও অটোরিকশাটি জব্দ করেছে পুলিশ। তবে বাসের চালক পালিয়ে গেছেন। তাঁকে আটকের চেষ্টা চলছে।