বিএনপির দুই নেতার সুপারিশে মাদ্রাসাছাত্র হত্যা মামলার তিন আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

মামলাপ্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির দুই নেতার সুপারিশে মাদ্রাসাছাত্র হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে আটকের দুই ঘণ্টা পর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। অবশ্য বিএনপির ওই দুই নেতার নাম ভয়ে কেউ প্রকাশ করেননি।

ছাড়া পাওয়া তিন আসামি হলেন বাচ্চু মিয়া (৪৮), ইব্রাহিম মিয়া (৫২) ও দুলাল মিয়া (৪০)। তাঁদের মধ্যে বাচ্চু মিয়া ও দুলাল মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের ধামাউড়া গ্রামের বাসিন্দা। ইব্রাহিম মিয়া একই ইউনিয়নের অরুয়াইল গ্রামের বাসিন্দা। বাচ্চু মিয়া অরুয়াইল ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর ইব্রাহিম মিয়া যুবলীগ নেতা। বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে সংখ্যালঘু পরিবারে নির্যাতন করে বাড়ি দখল ও বিভিন্ন মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ আছে। হত্যা মামলার এজাহার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বাচ্চু মিয়াসহ ওই তিন আসামি মঙ্গলবার দিনভর ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আদালত চত্বরে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের বাসিন্দা কুলসুম আক্তারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জেলা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ওমর ফারুকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আদালত চত্বরের পাশে পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ের সামনে থেকে তাঁদের আটক করেন। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতার সুপারিশে হত্যা মামলার তিন আসামিকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির প্রভাবশালী ওই দুই নেতা হত্যা মামলার ওই তিন আসামিকে বিএনপির নেতা বলে দাবি করেছেন।

কুলসুম আক্তার অভিযোগ করেন, ‘আমি ফোন করে ওই তিন আসামির বিষয়টি ডিবি পুলিশের কয়েকজন অফিসারকে জানাই। এরপর অনেক পুলিশ এসে তাদের গ্রেপ্তার করে অফিসে নিয়ে গেছে। দুই ঘণ্টা পর বিএনপির দুই নেতা এসে তারা বিএনপির লোক বলে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে। আমি পুরো দুই ঘণ্টা ডিবি অফিসেই ছিলাম।’

জানতে চাইলে এসআই ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘না, না, এটি ফাও কথা। আমি জানি না। আটকের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। কে বলেছে নাম বলেন?’ বলেই তিনি কথা শেষ না করে অন্যজনের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে দিলেন। পরে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি আর সাড়া দেননি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সরাইল থানায় হত্যা মামলাটি করেন নিহত মাদ্রাসাছাত্র আল-আমীনের (১৭) বাবা সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. শফি আলী। মামলায় সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে ৭২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে। মামলায় এজহারভুক্ত আসামির তালিকায় ২৯ নম্বর আসামি হলেন বাচ্চু মিয়া, ৪২ নম্বর আসামি ইব্রাহিম মিয়া ও ৪৬ নম্বর আসামি দুলাল মিয়া।

জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, তিন-চার দিন আগে তিনি এখানে যোগদান করেছেন। ঘটনার সময় তিনি অফিসে ছিলেন না। শুনেছেন, এসআই ওমর ফারুক সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের পদধারী বাচ্চু মিয়া নামের এক নেতাকে আটক করেছেন। পরে আধা ঘণ্টা পর ফারুক তাঁকে (ওসিকে) জানান, যে বাচ্চুকে আটক করা হয়েছে, এটা সেই বাচ্চু নয়, এ জন্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের বিরোধিতা করে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ থেকে হেফাজতে ইসলাম আন্দোলন করছিল। ২৮ মার্চ দেশব্যাপী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও তৌহিদি জনতা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি চলছিল। ওই দিন সরাইল বিশ্বরোড মোড় এলাকায় হরতাল কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন মামলার বাদীর ছেলে আল-আমীন। সেখানে এক নম্বর আসামির (মোকতাদির চৌধুরীর) নির্দেশে কয়েকজন আল–আমীনকে প্রথমে মারধর করেন, পরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় ওই সময় পুলিশ কোনো মামলা নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ছেলে আল-আমীন হত্যার বিচারের আশায় গত সোমবার সরাইল থানায় হত্যা মামলাটি করেন বাবা মো. শফি আলী।