গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা জয়ী
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যানকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মোকাররম হোসেন সুজন (ঘোড়া প্রতীক)। তিনি উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং আলমবিদিতর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছিলেন।
উপজেলার নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার নির্বাচনের ফল গণনার পর মোকাররম হোসেন পান ২৯ হাজার ৪১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন (কাপ-পিরিচ প্রতীক) পেয়েছেন ২৮ হাজার ২০৮ ভোট। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মাত্র ৮৩৩ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির বহিষ্কৃত ওই নেতা বিজয়ী হন।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মাত্র ৮৩৩ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মোকাররম হোসেন সুজন বিজয়ী হন।
নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে আছেন বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান প্রামাণিক (আনারস প্রতীক)। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৭ হাজার ১০৮টি। উপজেলাটিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন সাতজন। মোট ভোটারদের বিপরীতে ৩৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন।
এদিকে গতকাল রাত আটটার দিকে ভোটের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণার আগেই ভোট গণনা কক্ষের বাইরে বিজয় মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মোকাররম হোসেনের সমর্থকেরা। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্র জানিয়েছে, গতকাল রাতে দুই পক্ষের বিজয় মিছিল নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই ভোট গণনা কক্ষে প্রবেশ করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান বাবলু (রংপুর-১)। ফলে এ সময় উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে সমর্থকদের সেখান সরিয়ে দেয় পুলিশ। পরে সংসদ সদস্যও সেখান থেকে চলে যান। উত্তেজনা কমলে রাত সাড়ে ১১টায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় মোকাররম হোসেনকে (ঘোড়া) বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
জনগণের ভালোবাসা পেয়ে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। গঙ্গাচড়ার মানুষ আমাকে উপজেলা পরিষদে দেখতে চায়, এ জন্যই আমাকে নির্বাচিত করেছে। আমি গঙ্গাচড়াবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে তাদের পাশে থাকব।’জয়ের প্রতিক্রিয়ায় মোকাররম হোসেন
জয়ের পর সমর্থকদের উদ্দেশে মোকাররম হোসেন বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসা পেয়ে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। গঙ্গাচড়ার মানুষ আমাকে উপজেলা পরিষদে দেখতে চায়, এ জন্যই আমাকে নির্বাচিত করেছে। আমি গঙ্গাচড়াবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে তাদের পাশে থাকব।’
মোকাররম জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আলমবিদিতর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপির যে দুই প্রার্থী এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করেছেন, তাঁরা স্থানীয় মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। তাই তাঁরা প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের বহিষ্কার করলেও এখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। স্থানীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের আরও ক্ষতি হতো বলে মনে করেন তিনি।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে দুই নেতার অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ভবিষ্যতে বলে দেবে কী করতে হবে।’