রাত থেকেই হিমেল হাওয়া বইছে। ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতের দাপটে কাবু ব্রহ্মপুত্র পাড়ের জনপদ ফুলছড়ির উদাখালি ইউনিয়নের জনজীবন। আজ বুধবার ভোরে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শীতের তীব্রতায় মানুষ জড়সড়। সাতসকালে রাস্তাঘাট অনেকটা জনশূন্য। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল গাড়ি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে।
গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে উদাখালি ইউনিয়নের উদাখালি বাজার। পাশেই উদাখালি সরকারি বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। শীতের তীব্রতার মধ্যেই আজ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। আধা ঘণ্টা আগেই প্রস্তুত ছিলেন ভোট গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। কিন্তু কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম।
এক আনসার সদস্যকে নিয়ে প্রার্থীদের এজেন্ট ছাড়াও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে মুঠোফোন জব্দ করতে ব্যস্ত ছিলেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন। বাইরে ৪ জন পুলিশ সদস্য ও ১৩ জন আনসার সদস্যকে দেখা গেল। কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা চোখে পড়ল।
সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে প্রস্তুত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। কিন্তু যাঁদের জন্য এত আয়োজন, দেখা নেই সেই ভোটারদের। ৮টা ৪০ মিনিটে এই কেন্দ্রে প্রথম ভোট দিতে আসেন উদাখালি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার ও উদাখালি গ্রামের বাসিন্দা আমিনা আকতার। ৮টা ৫০ মিনিটে ভোট দিতে আসেন পূর্ব উদাখালি গ্রামের অশীতিপর নারী ভোটার রাজ কামিনী (৭২)। তিনি বলেন, ‘পরে ভিড় হবি তাই অ্যালাই আসনু ভোট দিতে।’
কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, কেন্দ্রে নারী ভোটারের সংখ্যা ২ হাজার ৫৯১। প্রথম আধা ঘণ্টায় ৭টি বুথে ভোট পড়েছে ১১টি।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে উদাখালি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রেও ভোটারের দেখা পাওয়া যায়নি। অলস বসে ছিলেন ভোট গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এই কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২ হাজার ৫৮৭। সকাল সোয়া ৯টা পর্যন্ত কেন্দ্রের ৭টি বুথে ভোট পড়েছে ৪২টি।
এবারও সব ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সিসিটিভি সক্রিয় রাখতে আলাদা একটি কারিগরি দল কাজ করছে।
ভোটার উপস্থিতির একই চিত্র পাশের কালীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সিংড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সন্তোষজনক। সকালে ভোটারের উপস্থিতি কম হলেও ধীরে ধীরে উপস্থিতি বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, ২ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গাইবান্ধা-৫ আসন। প্রতিটি ইউনিয়নে ১ জন করে মোট ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ৫ প্লাটুন বিজিবি, অস্ত্রধারী আনসার সদস্য, ১ হাজার ৩২০ জন পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
ফরিদুল ইসলাম আরও বলেন, এবারও সব ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সিসিটিভি সক্রিয় রাখতে আলাদা একটি কারিগরি দল কাজ করছে। ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এতে বুথ কক্ষে বিশৃঙ্খলার চিত্র ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনোভাবেই বিশৃঙ্খলাকারী ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়া হবে না।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ আসনে ইভিএমে ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি বুথে ভোট গ্রহণ চলছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় ৯টি কেন্দ্রে জেনারেটরের মাধ্যমে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮। উপনির্বাচনে মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গাইবান্ধা-৫ আসন। প্রতিটি ইউনিয়নে ১ জন করে মোট ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন নৌকা প্রতীক নিয়ে, জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে, কুলা প্রতীক নিয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মো. মাহবুবুর রহমান ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে আপেল প্রতীকের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ ভোট কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করে আগেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত বছরের ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ১২ অক্টোবর উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঢাকা থেকে সিসিটিভি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখে ভোট গ্রহণের মাঝপথে নির্বাচন বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। সে সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোট পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চারজন ভোট বর্জন করেন। অনিয়মের তদন্তে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আজ ৪ জানুয়ারি উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।