বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ দফা দাবিতে আবারও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

১১ দফা দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেন শিক্ষার্থীরাছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ও ছায়া সংগঠনভিত্তিক রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা এক ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণের সময় বেঁধে দেন।

দুপুর ১২টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এটি উপাচার্যের বাসভবন, ছাত্রী হলসংলগ্ন সড়ক, কেআর মার্কেট ও বিভিন্ন অনুষদের করিডোর প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সেখানেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা শহীদুল হক, প্রক্টর আবদুল আলীম প্রমুখ উপস্থিত হন। তাঁদের কাছে শিক্ষার্থীরা ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন।

শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালু; বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও পিএইচডি ডরমেটরি আগামী ৩১ আগস্ট থেকে খুলে দিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সব ধরনের দলীয় ও ছায়া সংগঠনভিত্তিক রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর সব সিদ্ধান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে গ্রহণ করতে হবে; সব অনুষদে শিক্ষা এবং গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ডিন কাউন্সিল কর্তৃক সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং অতি দ্রুত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন দিতে হবে; বিগত স্বৈরাচার সরকারের যারা দোসর ছিল, তাদের গণতদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

শিক্ষার্থীদের দাবি মধ্যে আরও রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো প্রকার হয়রানিমূলক আচরণ করা যাবে না; প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং তাঁদের কোনো দলীয় পরিচয় থাকা যাবে না; বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নারী নিরাপত্তা ও নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন করতে হবে এবং কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে; নিরাপত্তা কাউন্সিলের নবনিযুক্ত পরিচালক মাসুম আহমাদকে ওই পদ থেকে অপসারণ করতে হবে; বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজটমুক্ত করতে দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবদুল আলীম বলেন, ‘এই ১১ দফার মধ্যে বেশির ভাগ দাবিই গতকাল (বুধবার) রাতে মেনে নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। কাগজে-কলমে লেখা না থাকলেও হল ও অনুষদের বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাদের একটু সময় দাও। আলোচনা করে সব দাবির বিষয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেব।’

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল বুধবার রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। সেখানে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ এবং আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর রাতে ওই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করা হয়।