সিলেট সিটি নির্বাচন ঘিরে হঠাৎ আলোচনায় আনোয়ারুজ্জামান, আ.লীগে ‘চাপা ক্ষোভ’
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র প্রার্থী হতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাতজন নেতা মাঠে আছেন। তাঁদের মধ্য থেকে একজন দলীয় মনোনয়ন পাবেন, এত দিন এমনটাই মনে করা হচ্ছিল।
তবে হঠাৎ করে গুঞ্জন উঠেছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। সম্প্রতি তাঁর অনুসারীরা নগরজুড়ে এ প্রচারণা চালান। এর ফলে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর প্রার্থীদের মধ্যে ‘চাপা ক্ষোভ’ দেখা গেছে।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আনোয়ারুজ্জামান গত দুটি সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর ছিলেন। তিনি নগরের ভোটারও নন। সম্প্রতি দেশে ফিরে মেয়র পদে নির্বাচন করতে দলীয় উচ্চপর্যায়ের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁর এই আগমন ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’র মতো। এ নিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা পেয়ে মাঠে নেমেছি। সিলেট নগরের সঙ্গে আমার দীর্ঘকালের সম্পর্ক। দলীয় মনোনয়ন পেলে ও নির্বাচিত হতে পারলে এই শহরকে ডিজিটাল ও আদর্শ শহরে পরিণত করতে কাজ করব।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ২২ জানুয়ারি সকালে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ওই দিন হাজারো কর্মী-সমর্থক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শহরে নিয়ে আসেন। এ সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান অন্যতম। গত বৃহস্পতিবার আনোয়ারুজ্জামান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও দেখা করেন। এরপর থেকেই জোরেশোরে আলোচনায় আসে তাঁর নাম।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব (প্রার্থিতা) বিষয়ে দলীয় কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি। এখানে আমিসহ আরও কয়েকজন সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছি। সবাই কাজ করছি। তিনি (আনোয়ারুজ্জামান) নতুন মনোনয়নপ্রত্যাশী। দল যাঁকে প্রার্থী করবে, তাঁর পক্ষেই আমরা সবাই কাজ করব।’
২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত চারবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। করোনাভাইরাস মহামারির সময় ২০২০ সালের ১৫ জুন মারা যান তিনি।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়াও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর সাত নেতা হলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল ও আজাদুর রহমান আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ শিপলু ও সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী। তাঁরা নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
আনোয়ারুজ্জামান দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন—এমন প্রচারণা নিয়ে সরাসরি কোনো কথা বলতে রাজি হননি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অধিকাংশ প্রার্থী। যোগাযোগ করা হলে আসাদ উদ্দিন আহমদ এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনীতি করতে গিয়ে অনেকবার জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। নেত্রীও আমাকে কয়েকবার কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করেছেন। তবে নির্বাচনের কোনো সুযোগ পাইনি। একটা সুযোগ দরকার। এ জন্য কাজ করছি। তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’