ত্রিশালে সাতটি স্থানে পাঁচ মাসে ৬৩ সড়ক দুর্ঘটনা
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলা এলাকায় সাতটি জায়গায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। জায়গাগুলোয় গত পাঁচ মাসে ৬৩টি দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পাশাপাশি অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছেন এলাকাবাসী। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ত্রিশালের আমীরাবাড়ি ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকায় সম্প্রতি দুর্ঘটনা বাড়ায় ক্ষুব্ধ সেখানকার বাসিন্দারা। গত সোমবার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তোফায়েল আকন্দ নামের এক যুবকের লাশ মহাসড়কে রেখে বিক্ষোভ ও সড়কেই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ঘটনার পর সোমবারই সেখানে দুটি গতিরোধক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।
সওজের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘সড়কের কারণে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিই। সড়ক বিভাজক অবৈধভাবে কাটার পর বন্ধ করা হয়েছে। তার পরও আবার কিছু কাটা হয়েছে। এসব রোধে মাস তিনেক আগে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের তৎপরতা রয়েছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দিকে দ্রুতগতিতে চলাচল করা গাড়িগুলো গতিরোধকের কাছে এসে গতি কমিয়ে চলছে। কাছে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা শনাক্ত করে সাইনবোর্ড রয়েছে। সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ত্রিশাল বাজার পর্যন্ত আট কিলোমিটার এলাকায় সড়ক বিভাজকে অবৈধভাবে ১৪টি স্থানে কাটা পাওয়া যায়। এই স্থানগুলো দিয়ে মোটরসাইকেল, ত্রি–হুইলারসহ অন্যান্য গাড়ি এক লেন থেকে অন্য লেনে যাচ্ছে। অন্তত পাঁচজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সড়ক বিভাজকে অবৈধ কাটা অংশ দিয়ে যানবাহন ইউটার্ন করতে গিয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের ৭টি স্পটে ৬৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৪ জন ও আহত অবস্থায় ৯৬ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে এর পরিসংখ্যান ফায়ার সার্ভিস সংরক্ষণ করে না।
ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. সাদিকুর রহমান বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের বগারবাজার থেকে চুরখাই সিবিএমসিবি হাসপাতাল পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকায় ৭টি জায়গায় বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বগারবাজার, চেলের ঘাট, সাইনবোর্ড, রাগামারা এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। এর বাইরে কাজির শিমলা, বৈলর নূরুর দোকান এলাকা ও মডেল মোড় এলাকাতেও দুর্ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তার দৃষ্টিতে ওই সাত স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার বেশি হওয়ার কারণগুলো হলো সড়ক বিভাজক অবৈধভাবে কেটে ইউটার্ন, উল্টো পথে গাড়ি চলা, অতিরিক্ত গতি ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ওভার টেকিং, অদক্ষ চালক, ত্রি-হুইলারের বেপরোয়া গতিতে চলা ও সড়কের নির্দেশনাগুলো না মেনে চলাচল। একই রকম ভাষ্য, ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেনেরও।
সাইনবোর্ড এলাকায় সড়কে দাঁড়িয়ে কথা হয় পাশের হরিরামপুর গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের সঙ্গে। একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন থেকে টাকা তুলছিলেন তিনি। তিনি বলেন, সোমবারও সাইনবোর্ড এলাকায় তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে। তবে কেউ মারা যাননি।
চলাচলের সুবিধার জন্য অবৈধভাবে সড়ক বিভাজক কেটে সেখান দিয়ে পারাপারের কারণে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন ময়মনসিংহের সভাপতি আবদুল কাদির চৌধুরী। এগুলো বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পাশাপাশি সড়ক পারাপারে মানুষকে সচেতন হতে হবে। গতিসীমিত রেখে যানবাহনকে চলাচল করতে হবে, তাহলে দুর্ঘটনা কমতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দু–তিন মাস ধরে দুর্ঘটনা বেড়েছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে রাস্তার পিচ গলে যাওয়ায় গাড়ি গতিতে চলতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। বহু লোক আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছেন। অনেক লোক মারাও গেছেন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।