তিন দিন পর আবার রাখাইনে গোলাগুলি-বোমা হামলা, এপারে আতঙ্ক
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের মধ্যে রাখাইন রাজ্যে তিন দিন ধরে গোলাগুলি বন্ধ ছিল। তবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টেকনাফের বিপরীতে রাখাইনের বলি বাজার এলাকায় আবার গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ হয়েছে।
নতুন করে গোলাগুলি শুরু হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়নের বাসিন্দারা। তবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ নেই।
রাখাইনের বলি বাজার এলাকায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একটি সীমান্তচৌকি আছে। সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, সকাল ৯টায় ওই চৌকিতে হামলা করে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। দুপুরের দিকে আরাকান আর্মির ওপর হেলিকপ্টার থেকে মর্টার শেল ও বোমা হামলা করে সরকারি বাহিনী। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে হেলিকপ্টার ওড়ার দৃশ্য দেখা যায়।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন পর ওপারের গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সকাল নয়টার পর থেমে থেমে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বিকট শব্দ ভেসে এসেছে। মিয়ানমারের বলি বাজার ও নাকপুরা গ্রামের আকাশে বিমান চক্কর দিতে দেখেছেন এপারের বাসিন্দারা। সেখানকার একটি সীমান্তচৌকি দখল ও পুনরুদ্ধারের জন্য দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে বলে জানা গেছে।
হোয়াইক্যং ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ জালাল বলেন, ওপারে নতুন করে গোলাগুলি শুরু হওয়ায় এপারের লোকজন আতঙ্কে ভুগছেন। রাতের বেলা ব্যাপক হারে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটতে পারে।
নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়ায় পরিস্থিতি শান্ত
তবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সীমান্তের খেতে ধান ও সবজি আবাদে নেমেছেন কেউ কেউ। নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ইউনিয়নের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ২৩ দিন ধরে বন্ধ থাকার পর গতকাল বুধবার থেকে ঘুমধুমের পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।
ঘুমধুমের সীমান্ত-লাগোয়া ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহেদ হোসাইন বলেন, তিন দিন ধরে গোলাগুলির শব্দ আসছে। সীমান্তের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় গতকাল থেকে পাঠদান শুরু হয়েছে। এরপরও আতঙ্ক থেকে যাওয়ায় শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
তুমব্রু, পশ্চিমকুল পাহাড়পাড়া, বাইশফাঁড়ি ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম দেখা গেছে। ৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে ঘুমধুমের জলপাইতলীতে দুজন নিহত হন। আহত হন আরও ৯ জন। এরপর ঘুমধুম সীমান্তের পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, টানা এক মাস রাখাইনে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। গত সোমবার সকাল থেকে সংঘাত থেমে গেছে। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন দিন ওপার থেকে এপারে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে না।
উখিয়ার পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রাখাইনে গোলাগুলি বন্ধ থাকায় এপারের মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। তবে গুলি এসে পড়ার ভয়ে হাজারো মানুষ সীমান্তঘেঁষা চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের ঘেরে যেতে পারছেন না।
রাখাইনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারিতে আছে বিজিবি।