বাস বন্ধ থাকায় ক্যারাম খেলে সময় কাটাচ্ছেন ফরিদপুরের শ্রমিকেরা
ফরিদপুরে আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে ৩৮ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এতে কাজ না থাকায় অলস সময় পার করছেন বাসের চালক ও চালকের সহকারীরা। আজ সকালে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ শ্রমিক ক্যারাম বোর্ড খেলে সময় কাটাচ্ছেন। তবে বাস ধর্মঘটের কারণে দুই দিন আয়–রোজগার বন্ধ থাকবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শ্রমিক।
মহাসড়কে থ্রি–হুইলার বন্ধ না হওয়ায় ফরিদপুরের সব রুটে আজ সকাল থেকে বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাত আটটা পর্যন্ত ৩৮ ঘণ্টার এই ধর্মঘট চলবে। জেলা বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে এ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। যদিও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, আগামীকাল শনিবার ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে সরকার ও প্রশাসনের ইন্ধনে এই বাস ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ঢাকা-বরিশাল নতুন বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে একটি টিনের শেডের নিচে ক্যারামের দুটি বোর্ড দেখা গেল। প্রতি বোর্ডে চার জন হিসাবে মোট আট শ্রমিক খেলছেন। দশর্ক হিসেবে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আরও কিছু শ্রমিক। এক গ্রুপের খেলা শেষ হলে আরেক দল খেলার জন্য অপেক্ষা করছে।
কাছে গিয়ে ওই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলো। তবে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রথমে তাঁরা কেউই কথা বলতে রাজি হলেন না। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক কথা বলতে রাজি হলেন।
এক শ্রমিক (৩২) বলেন, ‘যে জন্যে বাস বন্ধ করা হইলো, সেইটা তো আর ঠেইকা থাকল না। বাস বন্ধ করায় ওই সভায় মানুষ আরও বেশি হইছে। যাইয়া দেইখা আসেন, কত মানুষ ওই মাঠে (আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠ) জড়ো হইছে।’
ওই শ্রমিকের কথার পিঠে আরেক শ্রমিক (৩৪) বলেন, ‘এইডা সব ক্ষমতায় থাকা না থাকার জন্য জেদাজেদি। কিন্তু আমরা তো সাধারণ পাবলিক। আমাগো গাড়ি ঠেলাই কাম। আমাগো ফাটা কপাল, ফাটাই থাকে। জোড়া লাগে না।’
ওই আসরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন দূরপাল্লার একটি বাসের চালকের সহকারী মজিবর রহমান (৫৬)। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস। তাই আজও সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেছে। বাড়িতে বেশিক্ষণ মন বসছিল না। তাই বাসস্ট্যান্ডে চলে এসেছেন তিনি।
জেলা বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দাবি অনুযায়ী, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের দাবিতে তারা এই ধর্মঘট ডেকেছে। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ধর্মঘট ডাকায় অনেক শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ, অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার পরিবহনশ্রমিকেরা সাধারণ দৈনিক কাজের বিপরীতে মজুরি পান। ধর্মঘটের কারণে বাসের চালক ও চালকের সহকারীদের দুই দিন কোনো আয় হবে না।
খেলার আসরে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক (৩৬) বলেন, ‘ভাই, আমাগো কথার তো কোনো দাম নাই। আমাগো কথা ক্যাডা শোনে। সারা দিন কাজ করার পর চাল কিনে বাড়িত যাই। কিন্তু এই দুই দিন তো কাজ বন্ধ। ট্যাকা থাকবে না। নেতারাও তো কেউ ট্যাকা দিবে না। এখন নেতাদের কথা শোনা ছাড়া কোনো রাস্তাও নাই।’