নিজেদের পক্ষে ভোটার টানতে মরিয়া প্রার্থীরা

এ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি খুব কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রার্থীরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল সদরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিনের নেতৃত্বে নৌকার পক্ষে মিছিল। গতকাল তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রধান আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলম। জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কলার ছড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শাহজাহান আলম পেয়েছেন নৌকা।

জিয়াউল হক মৃধা সরাইল উপজেলার বাসিন্দা আর শাহজাহান আলম আশুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তবে সব প্রার্থী তাঁদের পক্ষে ভোটার টানতে মরিয়া।

দলীয় ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি খুব কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রার্থীরা। এ জন্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর লোকজন এলাকার ইমেজ (আঞ্চলিকতা) সামনে রেখে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে কিছুটা কাজও হচ্ছে বলে ধারণা করছেন প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ লোকজন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনটি সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ১০ হাজার ৭২ জন।

১৯৭৩ সালের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনটিতে আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারেনি। এখানে অনুষ্ঠিত একটি উপনির্বাচনসহ ১২টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছে ৬টিতে। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত তাহের উদ্দিন ঠাকুর জয় পেয়েছিলেন। এরপর কোনো প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। এর প্রধান কারণ ছিল দলীয় কোন্দল।

সরেজমিনে সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটাররা নিজ নিজ এলাকার প্রার্থীর দিকেই বেশি ঝুঁকে আছেন। দলীয় চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে ভোটাররা নিজ নিজ এলাকার প্রার্থীকে নিয়েই ভাবছেন।

এ আসন থেকে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জিয়াউল হক মৃধা। নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার–দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতা মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে (ধানের শীষ)। এলাকায় তিনি পরিচিত মুখ। অন্যদিকে শাহজাহান আলম নতুন মুখ।

শাহজাহান আলম বলেন, ‘আশুগঞ্জে কোনো দিন এমপি পাই নাই। এ জন্য এখানে আলাদা একটা আগ্রহ তো আছেই। সুশীল সমাজে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি নাই। তাঁরা আমার জন্য কাজ করছেন। তবে আঞ্চলিকতা কোনো বিষয় না। আমি কখনো কারও কোনো ক্ষতি করি নাই। এ জন্য আমার প্রতি সবার টান আছে। সব মহল থেকেই সুবিধা পাচ্ছি।’

এখানে আওয়ামী লীগের ১৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এখন তাঁদের আপনি পাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান আলম বলেন, ‘সবাই আমার পাশে আছে। সবাইকে পাচ্ছি। আমার কানে আসছে, দুজন নীরবে বিরোধিতা করছে। তবে এমনটি আমি বিশ্বাস করি না।’

জিয়াউল হক মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেখানে অবকাঠামোগত ও যোগাযোগের অসুবিধা হয়েছে, সেখানেই আমি উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমি সরাইল-আশুগঞ্জ কোনো ভাগ করিনি। সবাই আমার উন্নয়ন মনে রেখেছে। উভয় উপজেলাতেই আমার টান রয়েছে। আশুগঞ্জে তীব্র আঞ্চলিকতা দেখিনি। তবে সরাইলের মানুষের মধ্যে আমার জন্য আলাদা টান রয়েছে। আমি জনগণের প্রার্থী। শতকরা ২০ ভাগ মানুষ রাজনীতি করেন। ৮০ জন মানুষ রাজনীতির বাইরে। তাঁদের একটা তন্ত্র আছে, তা হচ্ছে স্বতন্ত্র। আমি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি এ শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচিত সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান। এতে আসনটি শূন্য হয়।

নির্বাচনে এই দুই প্রার্থীর বাইরে আরও তিনজন দলীয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন জাপার মনোনীত প্রার্থী আবদুল হামিদ (লাঙ্গল), জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম (গোলাপ ফুল) ও ন্যাশনাল পিপসল পার্টির রাজ্জাক হোসেন (আম)।