পিরোজপুরে এলজিইডির কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জ্ঞাত আয়ের অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তা রফিকুল হাসান ও তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুদকের পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আরিফ হোসেন বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।
রফিকুল হাসান এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি পিরোজপুরে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের বাসিন্দা।
দুদকের পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, রফিকুল হাসান বর্তমানে এলজিইডির সিএএফডিআরআইআরপির (ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লি সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্প) ঢাকার আগারগাঁওয়ে এলজিইডি ভবনে প্রকল্প পরিচালক পদে কর্মরত আছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি এলজিইডিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে পদমর্যদার অপব্যবহার করে তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
২০১৯ সালে দুদকের বরিশাল কার্যালয় রফিকুলের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি দুদকের কাছে সম্পদ বিবরণী জমা দেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর জাপান গার্ডেন সিটিতে ১ কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয় করে ১ হাজার ৭৪০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। তবে তাঁর দুদকের কাছে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ফ্ল্যাটের মূল্য দেখিয়েছেন ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৫০ টাকা। বিবরণীতে ফ্ল্যাট ক্রয়ে ৭৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬০০ টাকা গোপন করেছেন। এ ছাড়া জীবন বিমা প্রিমিয়াম মাল্টিপল পেমেন্ট পলিসির স্টেটমেন্ট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১১টি কিস্তিতে তিনি ১৭ লাখ ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও সম্পদ বিবরণীতে ১৩ লাখ ৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। এখানেও তিনি চার লাখ টাকার তথ্য গোপন করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর জাপান গার্ডেন সিটিতে ১ কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয় করে ১ হাজার ৭৪০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। তবে তাঁর দুদকের কাছে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ফ্ল্যাটের মূল্য দেখিয়েছেন ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৫০ টাকা।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, মো. রফিকুলের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৮০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০ টাকা। তাঁর বৈধ আয় ৯৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩৩৬ টাকা। পারিবারিক ও অনান্য ব্যয় ৫০ লাখ ৫ হাজার ১৪৩ টাকা। তাঁর কাছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ২ হাজার ৮৬৭ টাকা মূল্যের অসংগতিপূর্ণ সম্পদ রয়েছে। ফ্ল্যাটের মূল্য বাবদ তিনি যে টাকা পরিশোধ করেছেন এবং আয়ের উৎস দেখিয়েছেন, তা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।
পৃথক মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, রফিকুল হাসানের স্ত্রী কানিজ ফাতেমার সম্পদ বিবরণীতেও যে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানেও রফিকুলের কাছ থেকে পাওয়া এবং কানিজ ফাতেমার প্রবাসী ভাইদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন উৎস, কৃষি খাতের আয়ের বিবরণীও অসত্য ও অসংগতিপূর্ণ। কানিজ ফাতেমার স্থাবর-অস্থাবর ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৭৫১ টাকার সম্পদ আছে, যা তাঁর স্বামী রফিকুল হাসানের ঘুষ–দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে। তাঁদের সম্পদের নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানেও ভিন্নতা পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে।
কানিজ ফাতেমার স্থাবর-অস্থাবর ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৭৫১ টাকার সম্পদ আছে, যা তাঁর স্বামী রফিকুল হাসানের ঘুষ–দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে।
দুদকের পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. গোলাম মাওলা বলেন, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হওয়ায় রফিকুল হাসান ও কানিজ ফাতেমার বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা রুজু হয়েছে।