মুক্তাগাছায় প্রতিমন্ত্রীকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণা
ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই আকন্দ।
সোমবার বিকেলে মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত বিএনপি–জামায়াতের নৈরাজ্য ও মুক্তাগাছার যুবলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল হাই আকন্দ এ ঘোষণা দেন।
সমাবেশে আবদুল হাই আকন্দ সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরোধে মুক্তাগাছা উপজেলা যুবলীগ কর্মী খুন হন। এমন নজির মুক্তাগাছায় ছিল না। কে এম খালিদের সময়ই এমন ঘটনা ঘটেছে। এর কারণ, খালিদ তাঁর আধিপত্য রক্ষার জন্য নানা ধরনের অপকর্মকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। তিনি এলাকার কোনো উন্নয়ন না করে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে উন্নয়নের নামে টাকা তুলে নিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে আপনাদের সমর্থনে আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলে খালিদের এসব অপকর্মের অনুসন্ধান করে আইনের আওতায় আনা হবে।
একপর্যায়ে আবদুল হাই আকন্দ উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বলেন, খালিদকে আগামী দিনে মুক্তাগাছা থেকে বিতাড়িত করা হবে। এতে আপনাদের সমর্থন থাকলে দুই হাত তোলেন।’
জনসভায় আরও বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মুশফিকুর রহমান, মুক্তাগাছা শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ বি এম জহিরুল হক, মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ ঘোষ। বক্তারা প্রত্যেকেই সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর নামে নানা সমালোচনা করেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুল হাই আকন্দের প্রতি সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগের নিয়ন্ত্রণ খালিদের হাতে। আর অপর অংশের নিয়ন্ত্রণ আবদুল হাই আকন্দের হাতে। দলীয় বিরোধে নানা কর্মসূচি পৃথকভাবে পালিত হয়ে আসছে। গত ২৮ আগস্ট মুক্তাগাছা উপজেলা যুবলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান হত্যার পর আবদুল হাই আকন্দের অভিযোগ, খালিদের পক্ষের লোকেরা আসাদুজ্জামানকে হত্যা করে। এ হত্যায় নেতৃত্ব দেন খালিদের পক্ষের নেতা ও মুক্তাগাছা পৌরসভার মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকারের জামাতা মাহবুবুল আলম। আসাদুজ্জামান হত্যার পর মাহবুবুল আলমকে প্রধান আসামি করে ৩০ জনের নামে মামলা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান হত্যার পর ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আবদুল হাই আকন্দ এ হত্যাকাণ্ডের জন্য খালিদকে দায়ী করেন। তবে ওই দিন মুঠোফোনে কে এম খালিদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকার। তিনি নিজের জামাতার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। আসাদুজ্জামান হত্যার পর মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরোধ আরও বেড়েছে।
এ ব্যাপারে সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে খালিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এসব আমার বিরুদ্ধে দুষ্ট লোকদের ষড়যন্ত্র। এখন এসবে মনোযোগ দেওয়ার সময় নেই। এখন দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা আমার কাজ। সে কাজেই আমি বেশি মনোযোগী।’
আসাদুজ্জামান হত্যা মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তাধীন। পিবিআইয়ের ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তার বলেন, মাহবুবুল আলমসহ মামলার ২০ জন আসামি উচ্চ আদালতের জামিনে আছেন। সাতজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামলাটির তদন্ত দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে।