কুষ্টিয়ায় ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাকে মারধরের অভিযোগে হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবি
কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতার ওপর হামলার অভিযোগে হওয়া মামলাকে মিথ্যা উল্লেখ করে প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। মামলার আসামি তালিকায় থাকা ছাত্রদের পরিবারের সদস্যরা বুধবার বেলা ১২টার দিকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের এম এ রাজ্জাক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান।
এর আগে গত রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার যুগ্ম আহ্বায়ক সায়াদ ইসলাম (শ্রেষ্ঠ) বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
এতে গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বরে পিঠা উৎসবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন মামলার আসামি এস এ এম সাদিকের মামা কে এম জাহিদ। তিনি বলেন, ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া পৌরসভা প্রাঙ্গণে উদ্যোক্তা ও পণ্যমেলায় কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে মেয়েদের উত্ত৵ক্ত ও অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে। তাদের মধে৵ সায়াদ ইসলাম আগেও ছাত্রলীগ পরিচয়ে এমন কাজে যুক্ত থাকায় সাদিকসহ স্থানীয় ছেলেরা এর প্রতিবাদ জানায়। সায়াদ ইসলামসহ উত্ত্যক্তকারীরা নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে হুমকি দেওয়ার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
কে এম জাহিদ আরও বলেন, স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের হস্তক্ষেপে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেও উত্ত৵ক্তকারীরা নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে বাইরে থেকে আরও অনেকজনকে ডেকে মহড়া দিতে শুরু করে। একপর্যায়ে সাদিকসহ প্রতিবাদকারী কয়েকজনকে মারার চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। উপস্থিত জনসাধারণের সরব ভূমিকায় পরিবেশ শান্ত হলে দুই পক্ষ স্থান ত্যাগ করে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ করা হয়, পরবর্তী সময়ে রাত ৯টা ১৫ মিনিটে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করেছে—এমন গুজব ছড়িয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম নিয়ে মব জাস্টিসের নাটক সাজিয়ে সাদিক, প্রেমসহ অনেকের বাসায় হামলা চালানো হয়। তাঁদের বাসায় না পেয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরদিন সাদিক ও প্রেমকে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রেমকে ছাত্রলীগ পরিচয়ে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে তাঁর বাসায় আক্রমণ করা হয়। প্রেম এবং সাদিক কেউই ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত নন। প্রেম কুষ্টিয়ার ছয় রাস্তার মোড়ে এবং সাদিক ঢাকা সায়েন্স ল্যাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সম্মুখযোদ্ধা, যার তথ্যপ্রমাণ তাঁদের কাছে আছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সেসব ভিডিও ও ছবি দেখানো হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার যুগ্ম আহ্বায়ক সায়াদ ইসলাম একসময় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। যার বিভিন্ন প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মামলার আসামি আমির হামজার বাবা আবদুর রহিম, শাহারিয়ারের বাবা আবদুর রশিদ, প্রেমের মা সাইমা আক্তার ও সিয়ামের ফুপ্পা জয়নাল আবেদিন।
এর আগে গত রোববার কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া শাখার নেতারা। সেখানে অভিযোগ করা হয়, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও কিশোর গ্যাঙের সদস্যরা অস্ত্র নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা করে। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু একটি পক্ষ এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেক আইডি দিয়ে চরিত্র হরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। যা একদমই সত্য নয়।’