নাচোলে দুই শিক্ষার্থী হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ

নাচোলে জোড়া খুনের বিচারের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ সমাবেশ। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার মল্লিকপুর হাটেছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় পূর্ববিরোধের জেরে দুজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার মল্লিকপুর হাটের কাছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর সড়ক অবরোধ করে তাঁরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এতে সড়কের উভয় দিকে অনেক যানবাহন আটকা পড়ে।

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে মল্লিকপুর হাটে বিজয় দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে ফেরার পথে মাসুদ রানা (২২) ও রায়হান (১৫) নামের দুই ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মাসুদ উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের খলসি গ্রামের এজাবুল হকের ছেলে ও রায়হান একই এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে। মাসুদ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এবং রায়হান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নিহত মাসুদ নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। সম্প্রতি ফেসবুকে এক ভিডিওতে তাঁকে জয় বাংলা লিখতে দেখা যায়। তবে পুলিশের ভাষ্য, রাজনৈতিক বিরোধের জেরে এই হামলা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মাসুদ ও রায়হান হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে উপজেলার খলসি মোড় হাজারো নারী-পুরুষ ‘খুনিদের ফাঁসি চাই’ লেখা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। তাঁরা এক কিলোমিটার দূরে ঘটনাস্থলের কাছে মল্লিকপুর হাটে এসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। একই সময়ে রায়হানের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ এলাকাবাসী পৃথক মানববন্ধন করেন।

দেড় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন মাসুদের বাবা মো. এজাবুল, রায়হানের বাবা আবদুর রহিম, বড় ভাই আলী আকবরসহ এলাকার গণমাণ্য ব্যক্তিরা। সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন এজাবুল। তিনি বলেন, ‘হামরা তিন বাপ-বেটা কাম কইর‍্যা মাসুদকে পড়াইতাম। পড়াশোনার ক্ষতি হইবে দেখ্যা তাঁকে কুনু কাম করতে দিতুং না। সব স্বপ্ন ছিল ওকে (মাসুদ) ঘেরাই। হামার সব শ্যাষ হোয়্যা গেল। হামি খুনিদের ফাঁসি চাই।’

রায়হানের বাবা আবদুর রহিম বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত খুনিদের ফাঁসি হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার মন শান্ত হবে না।’ বড় ভাই আলী আকবর বলেন, ‘আমার ভাই একজন শিশু। সে প্রতিবন্ধী ছিল। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট, সবার আদরের ছিল। কোন কারণে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো? এটা কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়। বলা হচ্ছে, মাসুদ ছাত্রলীগ করত, এ জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা মোটেও ঠিক নয়। এখনো আসল খুনিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।’ দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বুধবার সন্ধ্যায় মাসুদের বাবা এজাবুল হক বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করা হয়। পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামি আজিজুল হক ও তামিমকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।