বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় অটোস্ট্যান্ড নেই, তবু ইজারা

বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড নেই। অটোরিকশাগুলো রাখা হয়েছে মহাসড়কে। সম্প্রতি শহরের ধুনটরোড মোড়েছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার বাস ও ট্রাক টার্মিনাল ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে; কিন্তু সেখানে গাড়ি রাখার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এখানে সড়কের পাশে সিএনজিচালিত অটোরিকশার কোনো স্ট্যান্ড নেই। তবুও পৌর কর্তৃপক্ষ ওই স্থানটি টার্মিনাল দেখিয়ে ইজারা দিয়েছে। সেখান থেকেও আদায় করা হচ্ছে টাকা।

বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও পরিবহনমালিক সংগঠনের দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ইজারা দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের বৈধতা পেয়েছেন ইজারাদারেরা। এতে মহাসড়কের ধুনট মোড়ের ব্যস্ত এলাকাটিতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয় পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা জানান, মহাসড়ক এলাকায় পরিবহন থেকে টাকা তোলা বন্ধের নির্দেশ থাকলেও শেরপুর পৌরসভার কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ইজারা দেওয়ায় অর্থ আদায়ের বৈধতা পেয়েছেন ইজারাদার।

শেরপুর পৌর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের ধুনট মোড় এলাকায় পৌরসভার প্রায় এক বিঘা জমিতে ট্রাক, বাস ও অটোরিকশার টার্মিনাল দেখিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে (১ জানুয়ারি) এ টোল আদায় করছেন ইজারাদারেরা।

সূত্রটি আরও জানায়, গত ২৫ নভেম্বর দরপত্রের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ১০ লাখ ৫ হাজার, ট্রাক টার্মিনাল ৮ লাখ ৭০ হাজার, সিএনজিচালিত অটোরিকশার টার্মিনাল ৮ লাখ ৪০ হাজার ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড ১২ লাখ ৫ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন তিন ব্যক্তি। দরপত্র অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে মিনিবাস থেকে ৫০, সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে ২০, ট্রাক থেকে ৫০, পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান থেকে ৩০ ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে ১০ টাকা হারে টোল আদায় করা শুরু হয়েছে।

পৌরসভার ইজারা দেওয়া জমিতে সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, শেরপুর শহরের ধুনট রোড মোড়ে অন্তত ১২ শতাংশ জায়গার ওপরে দুটি সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে। এর একটিতে লেখা হয়েছে ‘ট্রাক টার্মিনাল’, অপরটিতে ‘বাস টার্মিনাল’। এ ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কসংলগ্ন এবং শেরপুর-কাজীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ধুনট মোড় এলাকায় রাখা হয়েছে। এ সড়কের উন্নয়ন ও দেখভালের দায়িত্বে আছে বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। আর এ সড়কের ওপর থেকেই টার্মিনালের নামে অবৈধভাবে ইজারা আদায় করা হচ্ছে।

কয়েকজন পরিবহনমালিক জানান, ইজারাদারের লোকজন জোর করেই মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর থেকে প্রতিদিন টোল আদায় করছে। এতে ব্যস্ততম ধুনট মোড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং দুর্ঘটনা ঝুঁকিও বাড়ছে। অথচ ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে টার্মিনাল ছাড়া কোনো সড়ক বা মহাসড়ক থেকে টোল উত্তোলন না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে বগুড়া জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির শেরপুর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ব্যক্তিমালিকানাধীন তিনটি জায়গা টার্মিনাল হিসেবে ভাড়া নিয়ে বাস রেখে থাকেন। তাদের বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা বাস রাখার মতো পৌরসভার কোনো টার্মিনাল নেই। তবুও পৌর কর্তৃপক্ষ টার্মিনাল ইজারার নামে প্রতিটি গাড়ির বিপরীতে টাকা আদায় করছে। এটা একধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড।

বগুড়া জেলা ট্রাক ট্যাংক লরি ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শেরপুরে প্রকৃতপক্ষে কোনো ট্রাক টার্মিনাল নেই। এখন যে টার্মিনাল দেখানো হচ্ছে, তা মূলত টার্মিনালের মতো নয়। এ কারণে তাঁরা মহাসড়কের পাশে ট্রাক রাখছেন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পৌরসভার কাছ থেকে আমরা কোনো সেবা পাচ্ছি না। অথচ মহাসড়ক থেকে পৌর টোল আদায় করা হচ্ছে। এটা একধরনের অবৈধ চাঁদাবাজি ছাড়া কিছুই নয়।’

ট্রাক টার্মিনালের ইজারাদার আশরাফউদ্দৌলা মামুন প্রথম আলোকে বলেন, শেরপুর পৌরসভার ট্রাক টার্মিনালের জায়গার পরিমাণ খুবই কম। এখানে অন্তত ১০টি ট্রাক দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। সড়কের পাশে থেকে ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের টোলের টাকা আদায় করতে হচ্ছে। টার্মিনালের জায়গা বর্ধিত না করলে আগামীতে টার্মিনাল ইজারার টাকা আদায়ের পরিমাণও কমে যাবে।

এ বিষয়ে শেরপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও পৌরসভার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়জুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই পৌরসভার বিভিন্ন টার্মিনাল ইজারা হয়ে আসছে। তেমনি চলতি বছরও একইভাবে দরপত্রের মাধ্যমে ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক আশিক খান প্রথম আলোকে বলেন, টার্মিনালের যেটুকু জায়গা আছে, সেখানে সাইনবোর্ড দেওয়া আছে। এর বাইরে সড়ক বা মহাসড়কে টোলের নামে টাকা আদায় বৈধ হবে না। কেউ অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে ইজারার নামে টাকা আদায় করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।