নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ১৭তম প্রয়াণদিবস পালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের আয়োজনে আজ রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎমঞ্চে সেলিম আল দীনের গান পরিবেশন করা হয়।
এরপর পুরোনো কলা ভবন থেকে একটি স্মরণযাত্রা শুরু হয়। স্মরণযাত্রাটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সেলিম আল দীনের সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়।
স্মরণযাত্রায় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমসহ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। পুষ্পার্পণ শেষে সেলিম আল দীনের রচিত ‘চাকা নাটক’–এর কাহিনি উল্লেখ করে অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘“চাকা” নাটকে উনি (সেলিম আল দীন) দেখিয়েছেন একটি বেনামি লাশ তাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দিতে চেষ্টা করলেও গ্রামের কেউ তার লাশ স্বীকার করে না। কিন্তু পার্থক্য হলো উনার (সেলিম) লাশ নিয়ে যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এসেছিলাম, তখন ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী—উপস্থিত সবাই অপেক্ষা করছিলেন তাঁদের প্রাণের মানুষটির জন্য।’
সেলিম আল দীন বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার উল্লেখ করে শহীদুজ্জামানের ভাষ্য, সেলিম আল দীন আধুনিক নাটকের যে চর্চা, আধুনিক নাটকের যে রচয়িতা, তাঁদের মধ্যে উনি বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার। তাঁর নিজস্ব গতিতে, নিজস্ব ধারায় উনি নাটক রচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে সেলিম আল দীন যে নাটকগুলো রচনা করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে পাশ্চাত্যের কিছু ধাঁচ ছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি একের পর এক যেসব নাটক রচনা করেছেন, তাতে তিনি আমাদের নিজস্ব যে ঐতিহ্য, নিজস্ব যে মঞ্চ, আমাদের যে পরিবেশনা—সেটার ওপর ভিত্তি করে নাটকগুলো রচনা করেছেন। আমরা ঢাকা থিয়েটারের পক্ষ থেকে বেশির ভাগ নাটক মঞ্চায়িত করেছি। সেলিম আল দীন হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকবেন। বাংলা নাটক যত দিন বেঁচে থাকবে, বাংলা ভাষা যত দিন বেঁচে থাকবে, সেলিম আল দীন তত দিন বেঁচে থাকবেন।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, মঞ্চ নিয়ে সেলিমের অনেক ভাবনাচিন্তা ছিল। গ্রামে মঞ্চটা কেমন হতে পারে, গ্রাম থিয়েটার নিয়ে তাঁর অনেক পরিকল্পনা ছিল এবং নাট্য গবেষণার ধারাগুলোও পাল্টে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। এর আগে সব তথ্য-উপাত্ত, সব বই থেকে সংগ্রহ করা হতো—সেলিম সেই ধারণা পুরোটা পাল্টে দিয়েছেন। সেলিম নিজে যে কাজটি করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে যাঁরা নাট্য গবেষণায় কাজ করেছেন, সবাই সেলিমের পথেই হেঁটেছেন। বাংলা নাটকে যে বাঁকবদল ঘটেছিল, সেলিম আল দীনের মৃত্যুর পর নদীতে যেমন চর পড়ে যায়, তেমন একটা চর পড়েছে।
নাট্যাচার্যের প্রয়াণদিবসে নানা কর্মসূচির আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। সমাধিতে পুষ্পার্পণের পর দুপুরে আফসার আহমদ থিয়েটার ল্যাবে আয়োজন করা হয় ‘সেলিম আল দীন আলাপন’। এরপর সেলিম আল দীন রচিত মঞ্চনাট্যের স্থিরচিত্র প্রদর্শনী এবং গান ও নৃত্য পরিবেশনা এবং সন্ধ্যা সাতটায় সেলিম আল দীন রচিত নাটক ‘নিমজ্জন’ ও সর্বশেষ নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ১৭তম প্রয়াণদিবস উদ্যাপন পর্ষদের আহ্বায়ক সোমা মুমতাজের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে এবারের আয়োজন।