সিলেটের ৬ আসনে সরব আওয়ামী লীগের ২৩ মনোনয়নপ্রত্যাশী, আছেন প্রবাসী নেতারাও
‘যথাসময়ে’ আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ধরে নিয়ে সিলেটের ছয়টি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অন্তত ২৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্যরা যেমন আছেন, তেমনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও প্রবাসী নেতাদের নামও শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক এই প্রচারণায় যতটা সরব আওয়ামী লীগ, ঠিক ততটাই নীরব অন্য রাজনৈতিক দলগুলো।
সিলেটের ছয় সংসদ সদস্যের মধ্যে পাঁচজনই আওয়ামী লীগের। অন্য একজন গণফোরামের। প্রতিটি আসনেই কয়েক মাস ধরে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী তৎপর। এলাকায় বিলবোর্ড, ফেস্টুন, পোস্টার, তোরণ সাঁটিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন। এসব অনুষ্ঠানে তাঁরা সরকারের উন্নয়ন প্রচারের পাশাপাশি নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবেও জানান দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলছেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে ধরে নিয়ে অনেকে আগাম প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে এ প্রচারের মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন নয়, আসল উদ্দেশ্য দলীয় প্রধান ও নীতিনির্ধারণীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। তাই মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে সাধ্যমতো প্রচার চালিয়ে আলোচনায় থাকতে চাইছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের ঘিরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের নাম মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে। আবার সদরে না হলে সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে মিসবাহ উদ্দিন মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে আলোচনা আছে।
এ বিষয়ে মিসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমে আমার হাতেখড়ি। এরপর তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নানা দায়িত্বে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার বিষয়টি নিরন্তর প্রচার করে চলেছি। আমাদের নেত্রী যখন যেখানে আমাকে কাজে লাগাবেন, সেখানেই আমি আছি। কোনো প্রাপ্তির জন্য কাজ করি না। দল যেখানে যাঁকে প্রার্থী করবে, তাঁর পক্ষেই আছি।’
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কফিল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও সর্ব–ইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা মুহাম্মদ মনির হোসাইন মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন।
সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য গণফোরামের মোকাব্বির খান। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপর আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও লেখক অরূপ রতন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন লন্ডন শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল গনি।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদের পাশাপাশি এখানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান ও সদস্য গোলাপ মিয়া এবং সিলেট মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলমের নাম মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় প্রচার রয়েছে। সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদারের পাশাপাশি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের নাম মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে।
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন, লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আফসর খান সাদেক, গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর শাফি চৌধুরী, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম এবং গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সামনেই নির্বাচন। স্বাভাবিকভাবেই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৎপর থাকবেন। সিলেটেও এর ব্যতিক্রম নয়। বড় দল হওয়ায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। তবে এ নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব-বিভেদ নেই। যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর বিজয় নিশ্চিত করতেই সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।