বিগত সরকারের সময় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে অনিয়মের মহোৎসব হয়েছে: জ্বালানি উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বিগত সরকারের সময় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, অনিয়মের মহোৎসব হয়েছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ লোপাট হয়েছে, যা খুঁজে বের করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে একজন বিচারপতিকে প্রধান করে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জ্বালানি বিভাগের কোনো মানুষ এখানে থাকবে না। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ শনিবার খুলনার খালিশপুর রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
ফাওজুল কবির খান বলেন, স্বজনপ্রীতি ও কিছু মানুষকে সুবিধা দিতে অপ্রয়োজনে বেসরকারি খাতে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে ভর্তুকির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা নতুন বাংলাদেশ, এখানে সবার জন্য সমান সুযোগ। এখন আর আগে থেকে ঠিক করা থাকবে না, ওকে প্রজেক্টটা দেব এবং সে অনুযায়ী সাজানো হবে। সেই দিন শেষ। এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। এখন যার যোগ্যতা আছে, সবচেয়ে কম দামে সবচেয়ে ভালো কিছু দিতে পারবে, তারা কাজ করবে। আমরা আর অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেব না।’
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, বিদ্যুৎ কোম্পানিকে টাকাও দিতে পারি না, আবার বিদেশি হলে ডলার দিতে পারি না। গ্যাস আমদানির জন্য ডলার দিতে পারছি না। একটা বিতিকিচ্ছি অবস্থার মধ্যে আমরা পড়েছি। বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার জন্য কিন্তু বিদ্যুতের ট্যারিফ বারবার বাড়ানো হয়েছে। হেনতেন চার্জ যোগ হয়েছে। তবে সংকট যেমন আছে, সমাধানও তেমনই আছে। আমরা চেষ্টা করছি, অনিয়মের যে আর্কিটেকচার, এটা ভেঙে দিয়েছি। বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে পুনর্গঠন করছি।’
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘দুর্নীতি সব সময় মাথা থেকে শুরু হয়। বর্তমান সরকারের প্রধানসহ অন্য উপদেষ্টারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমরা নিজেরাই দৃষ্টান্ত হব। কাজেই আমরা দুর্নীতির ঊর্ধ্বে। আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজন নেই, মামা, চাচা, ভাতিজা নেই, সরকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাদের কেউ নেই। আমাদের আত্মীয়স্বজন আছে, তবে তাঁরা আমাদের বাসায়। আমরা আশা করি, এ দৃষ্টান্ত উপদেষ্টারা স্থাপন করব। আমরা চাই, আমাদের দেখে দেখে সচিবেরা এবং তা দেখে দেখে সংস্থার প্রধানেরা দৃষ্টান্ত গ্রহণ করবেন। মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে আছে, তা যেন পূরণ হয়। তা না হলে সবার জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। আমরা প্রত্যাশা পূরণ না করতে পারলে আমাদেরও কিন্তু মানুষ লাথি মেরে বের করে দেবে।’
খুলনার বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমরা শুধু শুনে আসছি, আমাদের জিডিপি বাড়ছে। আমরা নিম্ন আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। এখন দেখা যাচ্ছে, এটা উন্নয়নের ভ্রান্তি। এই পাওয়ার প্ল্যান্ট হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকায়। এটাও জিডিপি বাড়িয়েছে। কিন্তু এই পাওয়ার প্ল্যান্ট তো শিগগির কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। এই প্রকল্পটা কী হওয়া উচিত ছিল? আমরা আগে থেকেই জানি, এখানে গ্যাস আসা কঠিন। তাহলে কার স্বার্থে এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলো। কার স্বার্থে ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হলো, কিন্তু মানুষ তো কোনো উপকার পাচ্ছে না। নির্মাণের আগে এটা বন্ধ করা যেত। এখানে তো আমরা ১৬ থেকে ১৭ মেগাওয়াটের সোলার প্ল্যান্ট করতে পারতাম। এই প্ল্যান্ট চালাতে এখন বিভিন্ন অপশন খুঁজতে হবে। পারশিয়ালি চালানো যায় কি না, পরীক্ষা করা হবে। এ–জাতীয় উন্নয়নের চেয়ে না হওয়াই ভালো ছিল।’
এর আগে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা, বিদ্যুৎসচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়ে বলেন, জ্বালানি তেলের মধ্যে বেশির ভাগই ডিজেল ব্যবহৃত হয়। তারপর হচ্ছে অকটেন ও পেট্রল। অকটেন ও পেট্রল উচ্চবিত্তরা ব্যবহার করেন। এসবের পরিমাণ তুলনামূলক কম। এটা কমালে তেমন একটা প্রভাব পড়ে না। তবে ডিজেলের দাম ১ টাকা ২৫ পয়সা কমাতে কষ্ট হয়েছে। তাঁদের চেষ্টা থাকবে, যেন ভবিষ্যতে জ্বালানি তেলের মূল্য আরও কমাতে পারেন। আজ দিবাগত রাত ১২টার পর থেকেই জ্বালানি তেলের নতুন মূল্য কার্যকর করা হবে।