পাইকগাছায় ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের চেষ্টায় শত শত মানুষ
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কালিনগর গ্রামে ভদ্রা নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধের স্থানে রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন এলাকাবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার এলাকার মানুষ রাত জেগে স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢোকা আটকানোর চেষ্টা করেন। তবে আজ শুক্রবার ভোরে জোয়ারের পানিতে আবারও বাঁধ ভেঙে যায়।
পরে নদীতে ভাটার সময় বাঁধ মেরামতের ওই কাজে যুক্ত হয়েছেন শত শত মানুষ। কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ, নারী—সবাই আছেন সেই কাতারে। বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন তাঁরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে দেলুটি ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২২ নম্বর পোল্ডারের কালিনগর গ্রামের রেখামারী খালের গোড়ার দিকের এলাকায় ভদ্রা নদীর তীরের উপকূল রক্ষার বেড়িবাঁধের প্রায় ২০০ ফুটের মতো অংশ ভেঙে যায়। এ সময় ওই পোল্ডারের ভেতরে থাকা ১৩টি গ্রামের মধ্যে পানি প্রবেশ শুরু করে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের ভাঙা অংশ বড় হয়ে যাচ্ছে।
দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পলাশ রায় বলেন, ২২ নম্বর পোল্ডারের আয়তন প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর। বৃহস্পতিবার ভদ্রা নদীর পাশে প্রায় ৩০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। তাতে ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ফসল ও কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে চিংড়িঘের ও পুকুরের মাছ। শত শত মানুষ বাঁশ ও মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২২ নম্বর পোল্ডারের মধ্যে পড়েছে দেলুটি ইউনিয়ন। সেটি খুলনা পাউবো সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ-২–এর আওতায়। ওই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ফুট পানি বেড়েছে। উচ্চ জোয়ারের কারণে ভদ্রা নদীর পাশে দেলুটি ইউনিয়নের কালীনগরে প্রায় ৩০০ ফুট বাঁধ ভেঙে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধ মেরামত করা হলেও জোয়ারে সেটি আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুক্রবার সকাল থেকে আবার কাজ শুরু হয়েছে। দুপুরের পর জোয়ার হওয়ায় এখন আবার কাজ বন্ধ রয়েছে। ভাটার সময়ে আবারও কাজ শুরু হবে। আশা করছেন বাঁধ আটকানো যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মাহেরা নাজনীন শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে লিখেছেন, ‘অতিবৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকা ও রাস্তা প্লাবিত হওয়ায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া চলমান আছে। ইতিমধ্যে দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নম্বর পোল্ডারের কালীনগর ওয়াপদা নদীভাঙন (ভদ্রা নদী) এলাকায় আনুমানিক ৩০০ ফুট বাঁধ ভেঙে ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আগেই নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
এর আগে এ বছরের মে মাসের শেষ দিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে হওয়া উচ্চ জোয়ারে দেলুটি ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২২ নম্বর পোল্ডারের তেলিখালী গ্রামের কাছে ভদ্রা নদীর ২৫০ মিটারের মতো বাঁধ ভেঙে যায়। কয়েক দিন চেষ্টার পর ভাঙা স্থানের এক পাশে রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে পারেন স্থানীয় বাসিন্দারা ও পাউবোর কর্মীরা। তবে এর আগেই ওই এলাকার ১৩টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন।