সুখবর
যমুনার চরে ক্যাপসিকাম চাষ
হৃদয় মিয়া ইউটিউবে ভিডিও দেখে এই ক্যাপসিকামের বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হন। পরে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন।
হৃদয় মিয়া জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম চরে ক্যাপসিকাম চাষ করে চমক দেখিয়েছেন। সবজি চাষের পাশাপাশি চরে শুরু করেন উচ্চফলনশীল ক্যাপসিকাম চাষ।
হৃদয় মিয়া উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের চেঙ্গানিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি ওই গ্রামের আবু সাঈদের ছেলে। বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে হৃদয়ের ক্যাপসিকামের বাগান ঘুরে দেখা যায়, যমুনা নদীতে জেগে ওঠা বিশাল চর। চারপাশে নানা রকম ফসলের চাষ হয়েছে। তার মধ্যে শত শত গাছে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম ঝুলে আছে। একসময় এখানে নানা রকম ফসল চাষ করতেন। এখন উচ্চফলনশীল জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। বাগানে কাজ করছেন কয়েকজন কর্মী। হৃদয় মিয়া নিজেও গাছ পরিচর্যায় কাজ করছেন। কর্মীরা কেউ কেউ ঝুড়ি নিয়ে বাগান ঘুরে পরিণত ক্যাপসিকাম তুলে রাখছেন। অনেক লোকজন এই বাগান দেখতেও আসছেন।
কথা হয় হৃদয় মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, ক্যাপসিকাম চাষে যুক্ত হওয়ার গল্প। তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে এই ক্যাপসিকামের বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হন। পরে যমুনার জেগে ওঠা চরে নানা জাতের ফসল চাষ করা হতো। সেই ৪০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। জমি প্রস্তুত করতে শুরু করেন। বগুড়া থেকে কিছু উন্নত জাতের ক্যাপসিকামের বীজ এনে ওই জমিতে শুরু করেন চাষাবাদ। এতে তাঁর ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়।
■ ক্যাপসিকাম এ উপজেলায় প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেন হৃদয় মিয়া।
■ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হৃদয় মিয়া বলেন, ‘চরের জমিতে সবচেয়ে বেশি নানা রকমের সবজি চাষ হয়। তার আবার নির্দিষ্ট সময় থাকে। ইউটিউবের মাধ্যমে দেখতে পাই। অনেকেই ক্যাপসিকাম চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মন থেকে স্থির করলাম, আমিও চাষ শুরু করব। এখন আমার প্রতিটি চারায় ফল আসছে। সবচেয়ে বড় কথা, বাগানে আমরা নিজেরাই বেশি কাজ করি। এতে খরচ আমাদের অনেক কম হয়েছে। মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে চারায় ক্যাপসিকাম বিক্রির উপযোগী হয়। তবে সমস্যা হচ্ছে, এই অঞ্চলে ক্যাপসিকাম বিক্রি হয় না। কারণ, এই অঞ্চলের মানুষের ক্যাপসিকাম সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।’
হৃদয় মিয়া আরও বলেন, কিছু বিক্রি করতে হয়েছে ঢাকার কাওরান বাজারে। প্রতি মণ ক্যাপসিকাম বিক্রি করা হয়েছে চার থেকে আট হাজার টাকায়। ইতিমধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করা হয়েছে। এখন খেতে যে পরিমাণ ফসল আছে, তাতে অন্তত দেড় লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করা যাবে।
হৃদয় মিয়ার বাবা আবু সাঈদ বলেন, হৃদয় মিয়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে ইউটিউব দেখে আধুনিক পদ্ধতিতে ৪০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছে। পরিপক্ব হওয়ার পর প্রতিটি ক্যাপসিকামের ওজন ২৫০ গ্রাম হয়। যা বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অভাব-অনটন ঘুচবে বলে আশাবাদী তিনি। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্যাপসিকাম সবজিটি খাওয়ায় অভ্যস্ত না থাকায় ক্যাপসিকাম স্থানীয় কোনো হাটবাজারে বিক্রি করতে পারছি না। অনেকটা বাধ্য হয়েই বিক্রি করতে হচ্ছে ঢাকার কাওয়ান বাজারে নিয়ে। এতে সময় ও অর্থ দুটিই অপচয় হচ্ছে।
ইসলামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এল এম রেজুওয়ান বলেন, ‘ক্যাপসিকাম উচ্চমূল্যের একটি নতুন ফসল। এ উপজেলায় প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে এ ফসল চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হৃদয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।’