যশোরের ভৈরব নদে তিন কারণে ডুবছে জাহাজ

যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভাটপাড়া এলাকায় ভৈরব নদে গত মঙ্গলবার ভোরে কয়লাবোঝাই এই জাহাজটি ডুবে যায়ছবি: প্রথম আলো

যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভৈরব নদে এক মাসে তিনটি কয়লাবোঝাই জাহাজ ডুবে গেছে। নাব্যতা–সংকট, সরু চ্যানেল ও জাহাজগুলো পুরোনো হওয়ায় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। ডুবে যাওয়া জাহাজগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি উদ্ধার করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা ও জাহাজের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নিয়মিত খনন না করায় গুরুত্বপূর্ণ নওয়াপাড়া চ্যানেলের নাব্যতা-সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। ভৈরব নদে অবস্থান করা পণ্যবোঝাই কার্গো জাহাজগুলো পণ্য খালাসের অপেক্ষায় নদের কিনারে বড় বড় রশি দিয়ে গাছ বা পিলারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। ভাটার সময় নদে পানি কমে গেলে জাহাজের একটি অংশ চরে থাকে। অপর অংশ কাত হয়ে পড়ে। জাহাজগুলো পুরোনো হওয়ায় পণ্যের অতিরিক্ত ওজনের চাপ সহ্য করতে পারে না। ফলে অনেক সময় জাহাজের তলা ফেটে যায়। জোয়ারের সময় ফেটে যাওয়া অংশ বা কাত হয়ে পড়া অংশ দিয়ে পানি ঢুকে জাহাজ নদে তলিয়ে যায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) খুলনার পশ্চিম বদ্বীপ শাখার নৌসংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আশ্রাফ উদ্দীন বলেন, নওয়াপাড়া সরু চ্যানেল। ভৈরব নদের নাব্যতা অনুসারে নওয়াপাড়া চ্যানেলে ১০ ফুট পর্যন্ত গভীরতার (ড্রাফট সীমা) জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নওয়াপাড়া চ্যানেলে এর চেয়ে বেশি গভীরতার জাহাজ পণ্য নিয়ে ঢুকছে। তা ছাড়া যে কয়টি জাহাজ পণ্য খালাস করবে, কেবল সেই কটি জাহাজ নওয়াপাড়ায় ঢোকার কথা। অন্য জাহাজগুলো নিরাপদ চ্যানেলে (চালনা থেকে খুলনার লবণচরা পর্যন্ত) থাকবে। কিন্তু জাহাজগুলো এ নিয়ম না মেনে নওয়াপাড়ায় ঢুকে নদের কিনায় নোঙর করে থাকছে। ভাটার সময় নদে পানি কমে গেলে পুরোনো এসব জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ছে।

মোহাম্মদ আশ্রাফ উদ্দীন আরও বলেন, ভৈরব নদে গত এক মাসে তিনটি জাহাজ ডুবে গেছে। এর মধ্যে মাত্র একটি জাহাজ পানির তলা থেকে তোলা হয়েছে। অবশিষ্ট দুটি জাহাজ তুলতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়ে জাহাজ দুটির মালিককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে অভয়নগর উপজেলার দেয়াপাড়া এলাকায় ভৈরব নদে এমভি আর রাজ্জাক নামের একটি কয়লাবোঝাই জাহাজ ডুবে যায়। জাহাজে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা ৮২০ মেট্রিক টন কয়লা ছিল। ডুবে যাওয়ার সাত দিন পর জাহাজটি পানি থেকে তোলা হয়।

ডুবে যাওয়া জাহাজটির মাস্টার মো. মুরাদ হোসেন বলেন, ভাটার সময় নদে পানি একবারেই কমে যাওয়ায় জাহাজের তলা ফেটে পানি উঠতে শুরু করে।

১৩ জানুয়ারি বিকেলে অভয়নগর উপজেলার ধুলগ্রাম এলাকায় ভৈরব নদে এমভি মৌমনি-১ নামের একটি কয়লাবোঝাই কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়। জাহাজে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা ৭০০ মেট্রিক টন কয়লা ছিল। পানি থেকে জাহাজটি তোলার কাজ এখনো শুরু হয়নি।

শেষ গত সোমবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে অভয়নগর উপজেলার ভাটপাড়া এলাকায় ভৈরব নদে কয়লাবোঝাই এমভি পূর্বাঞ্চল-৭ কার্গো জাহাজটি কাত হয়ে ডুবে যায়। জাহাজটিতে প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন কয়লা ছিল।

নওয়াপাড়া নদীবন্দরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘ভৈরব নদে নাব্যতা-সংকট রয়েছে। আমরা ড্রেজিং করে নদের নাব্যতা ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।’

নওয়াপাড়া সার, সিমেন্ট ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল হোসেন বলেন, পণ্যবোঝাই জাহাজগুলো নিরাপদ চ্যানেলে (চালনা থেকে খুলনার লবণচরা পর্যন্ত) অবস্থান করবে। পণ্য নামানোর অপেক্ষায় দিনের পর দিন নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদে নোঙর করে থাকতে পারবে না। এমন একটা নিয়ম চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা কার্যকর না হওয়ায় এসব জাহাজডুবির ঘটনা ঘটছে। নিয়মটি কার্যকর করা হলে দুর্ঘটনা কমে যাবে।