পাহাড়ে অনিশ্চিত জীবন নিয়ে বাঁচতে হচ্ছে: সন্তু লারমা
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, ‘পাহাড়ে নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ নিয়ে বাঁচতে হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশে জন্মলগ্ন থেকে বিশেষ শাসনে শাসিত হয়ে আসছি। যে শাসন আমাদের পীড়া দেয়, আমাদের ব্যথিত করে; আমাদের জীবনকে সংকুচিত করেছে, আমাদের ভবিষ্যৎকে বিপর্যস্ত করেছে। আমাদের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার, আত্মতৃপ্তি নিয়ে বেঁচে থাকা, সেটি এখানে অনুপস্থিত।’
আজ শুক্রবার সকালে রাঙামাটি শহরের রাঙাপানি এলাকায় ‘মোনঘর’-এর (মোনঘর উচ্চবিদ্যালয়, মোনঘর শিশুসদন, আবাসিক) সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
সন্তু লারমা বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দর পরিবেশে নির্ভয়ে-স্বাধীনভাবে চলাফেরা করেছেন। আমরা সেই জীবন ফিরে পেতে চাই। আমরা ফিরে পেতে চাই বন-পাহাড়, পশু–পাখি, ঝরনায় সুন্দর পার্বত্য অঞ্চল। সেই পরিবেশ ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে পাহাড়ে লড়াই–সংগ্রাম হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে সমাধানের জন্য শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমাদের সীমাবদ্ধ জীবন কাটাতে হচ্ছে। সীমাবদ্ধ জীবন সুখকর হতে পারে না, অত্যন্ত কষ্টকর ও শ্বাসরুদ্ধকর।’
সকাল ১০টার দিকে মোনঘর মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মোনঘর উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক গৌরিকা চাকমা। বক্তব্য দেন চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়, মং সার্কেলের প্রধান রাজা সাচিংপ্র চৌধুরী, মোনঘরের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুভাষ চাকমার স্ত্রী রাখি দেওয়ান, মোনঘরের দাতা পিয়ার মার্চেল, মোনঘর পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথের এবং মোনঘরের প্রাক্তন ছাত্র ও ঘাগড়া কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামল মিত্র চাকমা প্রমুখ।
আলোচনা সভার আগে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রাঙাপানি গ্রামের মাঠে মোনঘরের ৫০ বছর সুবর্ণজয়ন্তী উদ্বোধন উপলক্ষে এক প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। সেখান থেকে একটি শোভাযাত্রা শুরু হয়ে মোনঘর মাঠে শেষ হয়।
সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবমুখর হয়ে ওঠে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে। উৎসবে অন্তত তিন হাজারের বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থী একত্রিত হয়েছেন। দীর্ঘদিন পর সহপাঠীদের কাছে পেয়ে আড্ডা, ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন অংশগ্রহণকারীরা। মোনঘর থেকে ৯২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থী অনির্বাণ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ সময় পর সহপাঠীরা একত্রিত হতে পেরে খুবই আনন্দিত।