লক্ষ্মীপুরে গুলিতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুই নেতা নিহতের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি, গ্রেপ্তারও নেই

আবদুল্লাহ আল নোমান
ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতা নিহতের ঘটনায় আজ বুধবার বেলা একটা পর্যন্ত মামলা হয়নি এবং কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় গুলির ঘটনা ঘটে।

গুলিতে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান (৪০) নিহত হয়েছেন। এ সময় নোমানের সহযোগী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম (৩৫) গুলিবিদ্ধ হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাকিবও মারা যান।

এ নিয়ে জেলাজুড়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পরিবার ও স্বজনদের ভাষ্য, ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে ৫ এপ্রিল সৌদি আরবে যান যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান। ২০ এপ্রিল দেশে ফেরেন তিনি। দুই দিন ঢাকার বাসায় থেকে ঈদের দিন (২২ এপ্রিল) গ্রামের বাড়িতে আসেন নোমান। গ্রামে আসার পরই সন্ত্রাসীরা তাঁকে টার্গেট করে। তিন দিনের মাথায় অনেকটা প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হলো আবদুল্লাহ আল নোমানকে। তাঁর সঙ্গে থাকায় প্রাণ দিতে হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রাকিব ইমামকেও। নিহত আবদুল্লাহ আল নোমান প্রস্তাবিত জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। আর রাকিব ইমাম বশিকপুর নন্দীগ্রামের রফিক উল্যার ছেলে।

নিহত নোমানের ভাই মাহফুজুর রহমান বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি সরাসরি সাবেক চেয়ারম্যান ও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কাশেম জেহাদীকে দায়ী করেছেন। মাহফুজুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জেহাদী পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। কাশেম আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা (ইউপি নির্বাচনে) করেও হেরেছিল। এরপর থেকে আমাদের হুমকি দিয়ে আসছিল। টার্গেট করে নোমান-রাকিবকে তারা খুন করেছে।’

নিহত রাকিব ইমাম
ছবি: সংগৃহীত

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য আজ বুধবার বেলা একটার দিকে আবুল কাশেম জেহাদীর মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলে তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা যুবলীগের সভাপতি এ কে এম সালাউদ্দিন টিপু বলেন, ‘আমার সঙ্গে আবদুল্লাহ আল নোমান জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে কারও গায়ে কখনো একটি টোকাও দেয়নি। সে ছিল যুবলীগের আইকন। তার এভাবে মৃত্যু হবে, সেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাবিক ইমামও ভালো ও নম্রভদ্র ছিল। আমরা দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কাশেম জেহাদী গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। আর তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন মাহফুজুর রহমান। ওই নির্বাচন নিয়েই কাশেম ও তাঁর বাহিনীর সঙ্গে মাহফুজ-নোমান পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছিল।

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই নেতা হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের বিভিন্ন দল কাজ করছে।

এদিকে নিহত দুই নেতার জানাজা আজ জোহরের নামাজের পর লক্ষ্মীপুর শহরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। এরপর বশিকপুর ইউনিয়নে আসরের নামাজের পর আবার জানাজা শেষে দুজনের লাশ দাফন করা হবে।

আরও পড়ুন