চাহিদামতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না, উৎপাদনে ধাক্কা

জেলায় মোট বিদ্যুতের চাহিদা ১৭৫ থেকে ১৮০ মেগাওয়াট। গত দুই দিনে ঘাটতির পরিমাণ ২০ থেকে ৪০ ভাগে এসে ঠেকেছে। 

বিদ্যুৎ না থাকলে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে কারখানা চালু রাখছেন মালিকেরা। গতকাল মুন্সিগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীতেপ্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালিকেরা। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাসের পর মাস বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিসিক শিল্পনগরীর প্রতিষ্ঠানও।

মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট বিদ্যুতের চাহিদা ১৭৫ থেকে ১৮০ মেগাওয়াট। তবে গরম মৌসুমে চাহিদার বিপরীতে এ জেলায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে ২০ থেকে ৩০ ভাগ বিদ্যুতের ঘাটতি থাকে। গত দুই দিনে ঘাটতির পরিমাণ ২০ থেকে ৪০ ভাগে এসে ঠেকেছে। অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এতে ২৪ ঘণ্টায় এলাকাভেদে ২ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

মুন্সিগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর অধীন জেলায় ৫৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল। গত কয়েক বছরের তীব্র অর্থনৈতিক মন্দা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস–সংকটের কারণে ৮ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। পাঁচ–ছয়টি প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে চরছে। কয়েকটি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ বিসিকের উপব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস–সংকটের কারণে বিসিক শিল্পনগরীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং কয়েকটি আংশিক বন্ধ হয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখতে হলে, শিল্পনগরী বাঁচিয়ে রাখতে হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের প্রয়োজন। এখনই বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা না গেলে মুন্সিগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরী মুখ থুবড়ে পড়বে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিসিক শিল্পনগরীর মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, অনেকটা অলসভাবেই বসে আছেন নিরাপত্তাকর্মী মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, তিন বছর আগে তিনি পাহারাদারের কাজ নেন। সে সময় শিল্পনগরী দিনভর কর্মচঞ্চল ছিল। শত শত মানুষ ও মালবাহী যানবাহনের আনাগোনা ছিল। এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, যার কারণে মানুষের আনাগোনা কমে গেছে।

বাণিজ্যিক এই এলাকার হাওলাদার ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে দেখা যায়, বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটরের সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের কাজ চলছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও বিসিক শিল্পনগরীর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন বলেন, কারখানা চালাতে প্রতি মাসে লাইনের গ্যাস ও বিদ্যুৎ মিলিয়ে তিন লাখ টাকার জ্বালানি খরচ হতো। ঘন ঘন লোডশেডিং ও লাইনের গ্যাসে চাপ না থাকায় সাত থেকে আট লাখ টাকার সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে হচ্ছে। জেনারেটরে লাখ টাকার তেল পুরতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ চার-পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। গত দুই বছরে ৩০ ভাগ উৎপাদন কমে গেছে। প্রতি মাসে তাঁকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। চাহিদামতো বিদ্যুৎ না থাকায় হাওলাদার ফিশিং নেট কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আকবর হোসেন।

দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় একটি সুতা তৈরির কারখানার বাইরে বসে থাকতে দেখা গেল কৃষ্ণ সাহা ও আবদুল কাইয়ুম নামের দুই কর্মীকে। তাঁরা বলেন, প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। সুতা তৈরিতে যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ৫০০ টাকা কেজি। মেশিনে কাঁচামাল দেওয়ার পর বিদ্যুৎ চলে গেলে সেগুলো দিয়ে সুতা তৈরি করা যায় না। মেশিন বন্ধ হলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে গরম হতে। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হাদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে তীব্র গরম থাকায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের চাহিদা খুব বেড়েছে। সে তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন কম। এ জন্য বাধ্যতামূলক লোডশেডিং করাতে হচ্ছে। যদি গ্যাসের চাপ বাড়ে, তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। সেই সঙ্গে শীত পড়লে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কমে আসবে। তখন বিদ্যুতের ঘাটতি দূর হয়ে যাবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।