চিকিৎসা নিয়ে যক্ষ্মা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়

সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়। গতকাল সিরাজগঞ্জ শহরের জ্ঞানদায়িনী উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির মধ্য দিয়ে যক্ষ্মা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসা নিয়ে যক্ষ্মা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিনা মূল্যে এই চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। গতকাল শুক্রবার নাটোরে যক্ষ্মা সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এ ছাড়া গতকাল সিরাজগঞ্জেও একই ধরনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নাটোর শহরের আলাইপুরের একটি রেস্তোরাঁ মিলনায়তনে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। যক্ষ্মা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ইউএসএআইডির পৃষ্ঠপোষকতায় আইসিডিডিআরবির পরিচালনায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে প্রথম আলো বন্ধুসভা। এই প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বিভাগের আটটি এবং রংপুর বিভাগের চারটি জেলায় প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জেলাগুলো হচ্ছে রাজশাহী, জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম।

নাটোর শহরে গতকাল দিনব্যাপী যক্ষ্মা সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা কর্মশালাঅনুষ্ঠিত হয়
ছবি: প্রথম আলো

সকালে নাটোরে এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন সিভিল সার্জন মশিউর রহমান। তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান নাটোর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক। উদ্বোধনী বক্তব্যে সিভিল সার্জন বলেন, পৃথিবীতে অনেক রোগ আছে। কিন্তু অন্যান্য রোগের আলোচনা পাশে রেখে যক্ষ্মা রোগ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। কারণ, এটি একটি নীরব ঘাতক। দেশে অনুমিত রোগীর সংখ্যা প্রায় পৌনে চার লাখ। এই রোগে প্রতিবছর ৪২ হাজার লোক মারা যান। আগে মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়ার পর মানুষ চিকিৎসা নিতে আসত। আর যক্ষ্মা বলতে শুধু কাসির সঙ্গে রক্ত ওঠাকে বোঝাত। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির মধ্য দিয়ে যক্ষ্মা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়েছে। এখন আর বলা হয় না, ‘যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই।’ বর্তমানে চিকিৎসা নিয়ে যক্ষ্মা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিনা মূল্যে এই চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এই রোগ নির্মূলে প্রয়োজন অধিকতর সচেতনতা।

কর্মশালায় যক্ষ্মা সম্পর্কে মূল আলোচনায় অংশ নেন আইসিডিডিআরবির প্রকল্প কর্মকর্তা বিনয় চন্দ্র সরকার ও প্রকল্প সহকারী (নাটোর) ইমদাদুল হক। বিনয় চন্দ্র সরকার শুরুতে যক্ষ্মা সম্পর্কে ভিডিও প্রদর্শন করেন। পরে তিনি তাঁর আলোচনায় যক্ষ্মা কী, যক্ষ্মা কীভাবে সংক্রমিত হয়, নির্মূলের উপায় কী, এর ভয়াবহতা ও বিস্তার এবং প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা দেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ইমদাদুল হক।

বন্ধুসভার সহসভাপতি সাবরিনা সুলতানার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নাটোর প্রতিনিধি মুক্তার হোসেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানান বন্ধুসভার সভাপতি আনাস আওরিয়া।

কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়।

‘সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ জরুরি’

এদিকে, ‘সচেতন হই সচেতন করি, যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’ স্লোগান নিয়ে সিরাজগঞ্জে দিনব্যাপী যক্ষ্মা সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকালে শহরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সড়কের জ্ঞানদায়িনী উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ইউএসএআইডির পৃষ্ঠপোষকতায় আইসিডিডিআরবির পরিচালনায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে সিরাজগঞ্জ প্রথম আলো বন্ধুসভা।

সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয় দিনব্যাপী কর্মশালা। বন্ধুসভার ৩০ জন সদস্য কর্মশালায় অংশ নেন। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা সার্ভিল্যান্স চিকিৎসা কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান, আইসিডিডিআরবির (ইউএসএইড অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি ইন বাংলাদেশ) সহকারী কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ফেরদৌস হোসেন, সিরাজগঞ্জে আইসিডিডিআরবির কর্মসূচি সহায়ক আমিনুল ইসলাম, জ্ঞানদায়িনী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী, বন্ধুসভার উপদেষ্টা প্রদীপ সাহা ও আবদুস সালাম এবং সিরাজগঞ্জে প্রথম আলোর প্রতিনিধি আরিফুল গণি প্রমুখ।

উদ্বোধন পর্ব শেষে ফেরদৌস হোসেন যক্ষ্মা সম্পর্কে ভিডিও প্রদর্শন করেন। পরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পাঁচটি দলে ভাগ করে কর্মশালায় অর্জিত জ্ঞানের ওপর দলভিত্তিক আলোচনা করা হয়। কর্মশালায় অংশ নিয়ে সিরাজগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি নাঈম সেখ বলেন, ‘যক্ষ্মা প্রতিরোধে বিসিজি টিকা দেওয়া হয়, এতটুকুই জানা ছিল। তবে কর্মশালায় অংশ নিয়ে যক্ষ্মার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পেরেছি।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বন্ধুসভার সদস্য সাব্বির আহমেদ ও স্বর্ণকমল। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়।