ককটেল হামলায় আহত বাসারের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবুল বাসার
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী নগরের গৌরহাঙ্গা এলাকায় ককটেল হামলায় আহত অটোরিকশার যাত্রী আবুল বাসারের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। গত বুধবার বিকেলে ককটেল হামলার পর রাতেই তাঁর চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে চিকিৎসকেরা জানাননি কবে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতে পারেন।

আবুল বাসারের (৩০) বাবার নাম তোজাম্মেল হোসেন। বাড়ি মেহেরপুর জেলার গাংনীতে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় তিনি খালাসি পদে চাকরি করেন। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য গত বুধবার রাজশাহী শহরের এসেছিলেন। স্টেশনে নেমে অটোরিকশায় উঠে তিনি নগরের লক্ষ্মীপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। রিকশার সামনে চালকের পাশের আসনে বসে যাচ্ছিলেন। আর তাঁর স্ত্রী ভেতরে বসেছিলেন। রিকশাটি নগরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরের নেসকোর কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সেখানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবুল বাসার ইতিমধ্যে জেনে গেছেন, তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁ চোখ দিয়ে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে চিকিৎসকেরা চেষ্টা করছেন চোখে যাতে কোনো ধরনের ইনফেকশন না হয়। চিকিৎসায় তাঁর একটু উন্নতি হয়েছে। আবুল বাসার বলেন, এখন আর স্ত্রীর চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়, নিজের চিকিৎসা শেষ করে আগে ফিরতে চান।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আবুল বাসারের চোখের ব্যান্ডেজ খুলে তাঁকে কালো চশমা পরিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর গলায় এবং ডান হাতে অসংখ্য স্প্লিন্টারের ক্ষত। তাঁর স্ত্রী বলেন, এই ক্ষতস্থান থেকে ছোট ছোট কাচের টুকরা বের হচ্ছে। খবর পেয়ে বুধবার রাতেই আবুল বাসারের শ্বশুর হাফিজুর রহমান হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। জামাতার চোখের অবস্থা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

রাজশাহী নগরের গৌরহাঙ্গা মোড়ে ককটেল বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ইজিবাইক। গত বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

আবুল বাসারের চোখের পরিস্থিতি নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, চোখের ভেতের যে কাভারিং থাকে, আঘাতে তা ফেটে ভেতরের স্ট্রাকচার বের হয়ে এসেছিল। অস্ত্রোপচার করে সেটা ঠিক করা হয়েছে, কিন্তু এই রোগীর আঘাত পাওয়া চোখে আর দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

ককটেল হামলায় আহত হয়েছেন অটোরিকশাটির চালক মো. জলিলও (৪৫)। তাঁর পেটে ও গলায় ককটেলের স্প্লিন্টার লেগেছে। তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরের হেতেম খাঁ এলাকায়। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাওয়াদী হোসেন জানান, অবরোধের সমর্থনে বের করা বিএনপির মিছিলের পর ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ ঘটনার পর ধাওয়া করে তিন হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে। পর আরও তিনজনকে আটক করা হয়। তাঁদের নামে মামলা দিয়ে বৃহস্পতিববার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল দাবি করেছেন, তাঁরা মিছিলের প্রস্তুতি নিতেই তাঁদের একজনকে পুলিশ আটক করে। এ সময় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। কারা ককটেল নিক্ষেপ করেছে, এটা তাঁরা জানেন না।