আবারও জয়ের জন্য ছুটতে চায় ঘোড়সওয়ার তাসমিনা
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় ছুটন্ত ঘোড়া থেকে পড়ে আহত ঘোড়সওয়ার তাসমিনা আক্তার সুস্থ হয়ে উঠছে। আবারও জয়ের জন্য ঘোড়ার পিঠে উঠে ছোটার অপেক্ষায় আছে সে।
গত শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহের ভালুকায় এক ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় ছুটন্ত ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয় তাসমিনা। ময়মনসিংহের কোকিল গ্রামে এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। সেই ঘটনার একটি ভিডিও পরের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ঘোড়া নিয়ে দৌড়াতে গিয়ে তাসমিনা আক্তার হঠাৎ তার ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যায়। পড়ে যাওয়ার পর তার পা ঘোড়ার পিঠের দড়ির সঙ্গে আটকে থাকায় তাসমিনা চলন্ত ঘোড়ার সঙ্গে বেশ কিছু দূর চলে যায়। ঘোড়া দৌড়াতে দৌড়াতে একপর্যায়ে থেমে গেলে লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে।
সেখানে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাসমিনা গত রোববার বাড়ি ফেরে। গত সোমবার বিকেলে তাসমিনার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার চকসুবল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তাসমিনা বাড়িতে শুয়ে আছে। শরীরের অবস্থা জানতে চাইলে সে বলে, ‘কোথাও ভাঙেনি। শুধু চামড়া ছিলে রক্ত বের হইছে। প্রথম দুই দিন খুব ব্যথা করছিল। কিন্তু আজকে হালকা ব্যথা আছে। এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষা শুরু হইছে। আজকে প্রথম পরীক্ষা ছিল। বাড়ি থেকে ভ্যানে করে কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আবার ভালোভাবেই বাড়ি ফিরেছি। ডাক্তারের লেখা ওষুধ খাচ্ছি। আর চার–পাঁচ দিনের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাওয়ার আশা করছি।’
আট–নয় বছর বয়স থেকেই তাসমিনা ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিত। তখন তার নিজের ঘোড়া ছিল না। অন্যের ঘোড়া জিতিয়ে দিয়ে পুরস্কার মালিকের হাতে তুলে দিয়ে শুধু জয়ের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরত সে। এখন তার নিজের ঘোড়া হয়েছে। তাসমিনা এখন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়া করছে। বর্তমানে সে ধামইরহাট মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ বছর সে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।
তাসমিনা আক্তার বলে, ‘ঘোড়া থেকে পড়ে আহত হওয়ার পর চিকিৎসক বলেছেন, আগামী দুই-তিন মাস যেন ঘোড়ার পিঠে না উঠি। শরীরের পেশিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য বিশ্রাম নিতে বলেছেন। তবে আমি ঘোড়ার পিঠে ওঠার জন্য অধীর আগ্রহে আছি। ঘোড়াই আমাকে পরিচিতি দিয়েছে। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অংশ নিয়ে। পুলিশের চাকরিতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন আছে আমার। কারণ, পুলিশ একাডেমিতে অনেক বড় বড় ঘোড়া আছে। পুলিশের চাকরি করলে ঘোড়া ছোটানোর স্বপ্নটা পূরণ হবে।’
তাসমিনাকে নিয়ে প্রথম আলো ২০১৫ সালের ১৭ জুন ‘এক দুঃখী ঘোড়সওয়ারের গল্প’ শিরোনামে প্রথম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। খবরটি প্রকাশের পর গাজীপুরের ঘোড়া খামারি উলফত কাদের তাকে ঘোড়া উপহার দেন। পরবর্তীতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকেও তাসমিনাকে ঘোড়া কিনে দেওয়া হয়। প্রথম আলোর উদ্যোগে তাকে নিয়ে ‘ঘোড়সওয়ার’ নামের প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়।